বই আলোচনা

আবু সাইদ লিপুর দুটি বই

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৩১ |  আপডেট  : ৪ মে ২০২৪, ০৩:২৪

কানাডা প্রবাসী লেখক-কলামিস্ট আবু সাইদ লিপুর দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বই দুটির নাম যথাক্রমে ‘আমার ভেতরের আমি’ এবং ‘বেলা অবেলার গল্প’। ‘আমার ভেতরের আমি বইটি মূলত স্মৃতিচারণমূলক। লেখক তার জীবনচলার পথে এ যাবতকাল দেখেছেন, অনুভব করেছেন, উপলব্ধি করেছেন তা-ই তুলে ধরেছেন তার লেখায়। মোট ষোলটি রচনা রয়েছে এ গ্রন্থটিতে। এসব রচনায় লেখকের আশপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, বিচিত্র সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় এবং তাদের আচার-আচরণ এবং সহজাত প্রবৃত্তির অনেকটাই তিনি তুলে এনেছেন তার লেখায়। পাশাপশি পরিচিত সে সব মানুষের যাপিত জীবন, জাতিগত সংস্কৃতিও বাদ যায়নি লেখকের দৃষ্টি থেকে। ‘আগন্তুক’ রচনাটিতে একজন অদ্ভূত মানুষের সঙ্গে যেমন আমরা পরিচিত হই, তেমনি ‘ক্ষুধার্ত আমি’তে নিরন্ন মানুষের শারীরিক এবং মানসিক নিদারুণ অনুভূতিরও উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ‘ঘুর্ণন কাব্য, ‘চড়াখঘাত’, ‘পাগল কথা’, ‘ডায়েটিং’, ‘দন্ত সমাচার’, ‘নিলু’, ‘প্রজাপতি’, ‘শনির বলয়ে’ ‘শাড়ির আঁচল’ প্রভৃতি। এর কোনোটি সিরিয়াস দরনের কোনোটি আবার হাস্যরসাত্মক। ফলে রচনাগুলো পাঠকের বিরক্তি উৎপাদন করবে না। প্রতিটি রচনা লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ঘটনা এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বর্ণনায় লেখক যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, তাই লেখাগুলো পড়তে পাঠককে অকৃষ্ট করবে নিঃসন্দেহে। তবে আগন্তুক রচনাটির শিরোনা ‘চলতি সহযাত্রী’ বা ‘ক্ষণিকের সহযাত্রী’ হলে অধিকতর অর্থবহ হতো বলেই মনে হয়।

 ‘বেলা অবেলার গল্প’ গ্রন্থেও রয়েছে ষোলটি গল্প। এগুলোর মধ্যে ‘আজ যেন সকাল না হয়’, ‘উধাও’, ‘কাপুরুষ’, ‘তিনি অভিনেতা হলেন’, ‘নিঃসঙ্গ তিনজন’, ‘পড়ন্ত বেলা’, ‘মাইটি মারে’, ‘দাদু, ‘রূপাজীবা’ নিঃসন্দেহে পাঠককে মোহাবিষ্ট করবে। প্রতিটি গল্পে জীবনের ভেতর থেকে জীবনের ছকি আঁকার চেষ্টা করেছেন লেখক। সেখানে যেমন লেখকের  অনুভবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তেমনি সামাজিক পরিবেশেরও প্রতিফলন ঘটেছে। বেশ কয়েকটি গল্প বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে লেখা। কানাডার পরিবেশকে উপজীব্য করেও রয়েছে কয়েকটি গল্প। প্রতিটি গল্পই সুখপাঠ্য। লেখক  গল্পগুলো কানাডার ক্যালগরিতে বসে লিখলেও বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতাও তাতে উঠে এসেছে।  বিশেষ করে ‘রূপাজীবা’ গল্পটিতে আমাদের সমাজের এক লজ্জ্বাকর অথচ নির্মম বাস্তবতাকে লেখক অত্যন্ত সুচারুরূপে তুলে ধরেছেন। তবে গল্পটির শিরোনা ‘রূপজীবী’ হলে সঠিক হতো। কেননা, জীবিকার কোনো লিঙ্গান্তর হয় না। সুদূর প্রবাসে থেকেও যে লেখক তার স্বদেশভূমিকে বিস্মৃত হননি, তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন তার লেখায়। তবে ‘মুক্তিপণ’ গল্পটি অতিনাটকীয়তায় ভরা; অনেকটা বাংলাদেশী সিনেমার মতো। বর্তমান বাংলাদেশে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের প্রচন্ড দাপটের সময়ে একজন তরুণীর পক্ষে একটি স্টিলের ফ্রাই প্যান দিয়ে তিনজন দুর্ধর্ষ ডাকাতকে কুপোকাত করা শুধু অসম্ভবই নয়, অবাস্তবও বটে। তবে ওই যে, গল্পে সবই সম্ভব বলে একটি কথা আছে। তাই গল্পকে গল্প বলেই ধরে নিতে হবে। গল্পের মধ্যে বাস্তবতা খুঁজতে গেলে হতাশ হতেই হবে।  সুসাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদকে তাঁর ইতিহাস ভিত্তিক একটি উপন্যাস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল- আপনার উপন্যাসের এই অংশটি ইতিহাসের সঙ্গে মেলে না, সাংঘর্ষিক। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি ইতিহাস লিখিনি, উপন্যাস লিখেছি।’ সে হিসেবে আবু সাইদ লিপুও কল্পনার আশ্রয়ে তার মনের কথাটি বলেছেন। সম্ভবত তিনি যেভাবে আমাদের দেশের মেয়েদের সাহসী ও বুদ্ধিমতি দেখতে চান, সেটাই তার ‘মুক্তিপণ’ গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন।

 খুব কম মুদ্রণ প্রমাদের জন্য বই দুটি পড়তে গিয়ে পাঠককে হোচট খেতে হবে না। ‘বেলা অবেলার গল্প’ এবং ‘আমার ভেতরের আমি’ বই দুটি আমাদের সাহিত্য প্রকাশনায় উল্লেখযোগ্য সংযোজন- এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।  বই দুটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন লুৎফি রুনা। প্রকাশ করেছেন মাহবুবুর রহমান বাবু, বইপত্র প্রকাশন, ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা। উভয় গ্রন্থের মূল্য ৪০০.০০ টাকা। পাঠক ঘরে বসেও বই দুটি কিনতে পারবেন  ৎড়শড়সধৎর.পড়স-এ অর্ডার করে। আমরা বই দুটির বহুল প্রচার কামনা করি।

-মহিউদ্দিন খান মোহন

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত