অতীত স্মৃতির তিনটি কবিতা     

  কামরুল হাসান ফেরদৌস

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০১ |  আপডেট  : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৩

[ মনে পড়ে আজ থেকে তেত্রিশ বছর আগে ১৯৮৮ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সুনামগঞ্জ কালেক্টরেটে বিসিএস প্রশাসন ৭ম ব্যাচের দশ জন নবীন কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে যোগদান করি। এ সময় সুনামগঞ্জে একাধারে ট্রাইং ম্যাজিষ্ট্রেট, ট্রেজারি অফিসার আর নেজারত ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে দায়িত্বপালন করতেন কবি আব্দুল ওয়াহাব আন্ধারমানিক। অনেক সিনিয়র হয়েও তিনি আমাদের ভাই ডাকার জন্য হৃদয় প্রশস্ত করে দেন । স্যারের গুণে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে নিয়ে তখন আমি বেশ কটি কবিতা লিখি, যা প্রায় সবগুলোই কালের আড়ালে হারিয়ে যায়। পুরানো কাগজপত্রে পেয়ে গেলাম তিনটি কবিতা।]
 
আন্ধারমানিক-১
  

আমাদের কবি ভাই আন্ধার মানিক
তাকে নিয়ে সকলের গর্ব অধিক ।
আজকাল যাহা ঘটে এদিক ওদিক 
কবি ভাই সব নিয়ে ভাবেন সঠিক ।
 
জীবনের দশদিক দেখাবার কবি 
তার লিখা কবিতায় সমাজের ছবি ।
গাঁওকে ধরিয়া বুকে কবিতা রচিল 
গাঁয়ের নামেতে নিজ নামটি রাখিল ।
 
আবদুল ওয়াহাব আসল যে নাম
আঁধার-মানিক নামে তাঁর নিজ গ্রাম। 
আন্ধার ঘুচে যাবে আলোক মানিকে
সমাজ উজল হবে তাহার ঝিলিকে ।
 
মেঠোফুল যদিওবা তবু মহাদামী 
কবিরূপে ধরাধামে তিনি অতি নামী।
আন্ধার মানিক খ্যাত কবি বড় ভাই 
সুনামগঞ্জে এসে তার দেখা পাই ।
  
সমাজের ছবি থাকে তার কবিতায়
তার কাজে মানুষের মন আলো পায় ।
পঠন পাঠনে তার অতি বড় ঝোঁক
পাকা মেধা খাটি মনে হাসি কৌতুক ।
 
বচনে লিখনে বাণী অতি ক্ষুরধার 
সহজে নিলেন কেড়ে হৃদয় আমার ।
তাঁর মতো মহাপ্রাণ বিস্মৃত মণি 
আজো তাঁর স্নেহধারা কল্লোল শুনি।
  
 
আন্ধারমানিক-২
 
বড়ভাই কবি আন্ধারমানিক
আমাদের গর্বের ধন 
কবিতায় তিনি আঁকিয়া দেখান
মানুষের আলো ছায়া মন ।
 
সেদিন সবাই তাহাকে ঘিরিয়া
শুনছি কাব্যকথা 
সহসা বলেন যমুনার বিয়ে
তাই তার মনে ব্যথা ।
 
আমরা ভাবিনু যমুনা তাহার 
হয়তোবা প্রেমিকা কোনো 
বিয়ে হয়ে যায় পরনর সনে
তাই তার ব্যথা হেনো ।
 
ডাকেন ইহারে হাঁকেন উহারে 
বলেন করবে কিযে
যমুনার বিয়ে হবে বলে তার 
মন নাহি বসে কাজে ।
  
অবশেষে তিনি রহস্যজট 
নিজেই ছড়ান হেসে
যমুনার বিয়ে একখানা বই 
পড়তেই হবে এসে ।
 
বইপড়া যার এতোই অধির 
আগ্রহ ভালবাসা 
এই আমাদের বড়ভাই কবি
আঁধারে আলোর আশা ।
  
 
আন্ধারমানিক-৩
 
ভাল লাগা যার চেতনার মুলে 
কিসের অভাব তার
শূন্য পেয়ালা অমৃত রসে 
ভরে যায় প্রতিবার ।
 
আমাদের মাঝে বিরাজি যে জন 
বিহারে অলকধাম 
মানব কাননে অপরূপ ফুল
অনেক তাহার দাম ।
 
অবহেলে আর অক্লেশে তার 
অবাক লিখনী চলে ।
যা কিছু লিখেন সোনা হয়ে যায়
ছেয়ে যায় ফুলদলে ।
 
তিনি আমাদের আন্ধারমানিক
কাব্যদেবীর বর 
যিনি আমাদের অকুলের কুল 
বড় ভাই কবিবর ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত