৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া ঠিকই, তবু সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২১, ১২:৩৮ |  আপডেট  : ১ মে ২০২৪, ২৩:৫৩

গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার সরকারি নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার কথা আজ বুধবার সকাল থেকে। পুরান ঢাকা, মিরপুর, উত্তরা, সাভার, গাজীপুর রুটের বাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, গণপরিবহনে অর্ধেকের বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে। অনেক বাসেই যাত্রীরা পাশাপাশি বসছেন। অনেক বাসে আবার অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার পর অতিরিক্ত আরও পাঁচ থেকে সাতজন যাত্রী তোলা হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া ঠিকই নেওয়া হচ্ছে। অনেক বাসে আবার ৬০ শতাংশ নয়, দ্বিগুন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর রুটের তানজিল পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী ফয়সাল রহমান। ফার্মগেটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি।

ফয়সাল রহমান বলেন, প্রথম দিকে দুটি আসনে একজন করে যাত্রী বসার জন্য অনুরোধ করেন চালকের সহকারী। অর্ধেক যাত্রী নেওয়া শেষ হলে পরে আবার ছয় থেকে সাতজন যাত্রী নেওয়া হয়। তাঁদের দাঁড়িয়ে যেতে বলা হয়। দাঁড়িয়ে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠ ও নারী যাত্রীদের অনেকে ডাবল করে বসতে দেন। কিন্তু চালকের সহকারী সব যাত্রীর কাছ থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। অন্য সময় ভাড়া নেওয়া হতো ১০ থেকে ১৫ টাকা, আজ নিয়েছে ৩০ টাকা।

তবে নীলাচল, মনজিল, হিমাচল, ঢাকার চাকাসহ বেশি কিছু পরিবহন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু এর মধ্যে অধিকাংশ পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও পরিবহনগুলো ভাড়া দ্বিগুণ করেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিরাজ ফকির বলেন, কাজলা থেকে কলাবাগান বাস ভাড়া ২৫ টাকা। কিন্তু আজকে ভাড়া নিল ৫০ টাকা। এক সিট খালি রেখে বসা সাপেক্ষে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও গাড়িতে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর গাড়ির সংকটও অনেক বেশি। অন্যদিন কোনোভাবে দাঁড়িয়ে যেতে পারলেও আজ আধা ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়েও গাড়িতে উঠতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে এই গাড়িতে উঠলাম।

নীলাচল পরিবহনের হেলপার সাগর বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছি। তবে লোকাল কিছু যাত্রী নিলে সেক্ষেত্রে এই হিসাব রাখা যায় না, তখন একটু বেশিই ভাড়া নিচ্ছি। তবে আমার ওয়েবিলের হিসাব অনুযায়ী যারা যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ ভাড়াই বাড়তি নিচ্ছি, বেশি নিচ্ছি না। নইলে আমার জরিমানা হবে।

এদিকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনার পর প্রথম কর্মদিবসে যানবাহন সংকট দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছু কিছু জায়গায় সড়কে কম সংখ্যক যান চলাচল করছে। আবার কিছু গাড়ি সরকারি নির্দেশনা মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করায় যাত্রীরা যানবাহন সংকটে পড়েছেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরেক যাত্রী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণ আগে গাড়ি পেলেও ভাড়া দিগুণ। আসলে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনে সরকার নির্দেশ দিলেও যানবাহন তো দ্বিগুণ হয়নি, ফলে গাড়ির সংকট বেড়েছে। আসলে এভাবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচলের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সিটে যাত্রী পরিবহন করা যায়। কারণ সাধারণ সময়ই আমরা দাঁড়িয়ে বা ঝুলে চলাচল করি, সেখানে অর্ধেক যাত্রী নিলে গাড়ি সংকট হওয়া স্বাভাবিক।

তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মার্কেট, বাজারে তো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই; সব স্বাস্থ্যবিধি গণপরিবহনে পালন হলেই তো করোনা চলে যাবে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর, উত্তরা, সাভার, গাজীপুর রুটের বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী দেখা গেছে। অনেক বাসে আসনে যাত্রীদের পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে।

এসব বাসের মধ্যে কয়েকটি বাসে যাত্রীরা প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের মুখে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার পর বাসের দরজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন চালকের সহকারীরা।

অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কারণে যাত্রীরা কিছুটা বিড়ম্বনায়ও পড়েন। বাস পেতে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বাস না পেয়ে অনেকে রিকশায়ও ওঠেন। তবে সে জন্যও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। শ্যামলী শিশুমেলা থেকে ফার্মগেটে কর্মস্থলে আসছিলেন রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, বাস না পেয়ে রিকশায় অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে তাঁকে আসতে হয়েছে।

যাত্রীদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার বিভিন্ন রুটের বাসের সুপারভাইজাররা বলেছেন, বাসমালিকদের পক্ষ থেকে চালক-সহকারীদের জন্য মাস্ক ও যাত্রীদের জন্য হ্যান্ডস্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে। অর্ধেক যাত্রী ও নির্ধারিত ভাড়াও নেওয়ার নির্দেশনা আছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত