হত্যা ও গুম মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী সুজনের তিনদিনের রিমান্ড  

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৯ |  আপডেট  : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪২

পঞ্চগড়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আল আমিন নামে একইজিবাইক চালককে হত্যা ও তার লাশ গুমের মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদা আকতার জুলিয়েট।

বৃহষ্পতিবার (৩০ জানুয়ারী) সকাল ১০ টায় তাকে ওই বিচারকের আদালতে নিলে পুলিশ প্রায় এক ঘন্টারও বেশী সময় শুনানী শেষে মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের পাচদিনের রিমান্ড চান। এসময় আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নুরুল ইসলাম সুজনকে মামলায় হাজির করার জন্য গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে হাজির করা হয়। সুজনকে আদালতে তোলার আগে সকাল থেকে পুলিশি কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তাকে আদালতে নিয়ে আসা হলে আদালত চত্বরে জড়ো হওয়া লোকজন ভূয়া ভূয়া, ভোট চোর ভোট চোর শ্লোগান দিতে থাকেন। সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টানা এক ঘন্টা শুনানী চলে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার শুনানীচলাকালে আদালতের উদ্যেশ্যে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব্ পালন করছি। আমি দীর্ঘ দিন সুপ্রীম কোর্ট বারের সম্পাদকের দ্বায়িত্বে ছিলাম, সরকারের সাবেক মন্ত্রী ছিলাম। একই দিনে তিনটি ঘটনায় ঢাকার যাত্রাবাড়ি, ডেমরা ও পঞ্চগড়ের মামলায় আমাকে আসামি করা হচ্ছে।

আমি এই ঘটনায় কোনো ভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে রাজনৈতিক উদ্যেশ্যে হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে যাওয়া আসাতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আদালতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের পরিবর্তন না হলে এখানে আসতে হতো না। আদালতে এসময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ।মামলার শুনানীতে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি, জিপি আব্দুল বারী, এপিপি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, আইনজীবি হাবিব আল আমিন ফেরদৌস সহ অন্তত ১০জন অংশগ্রহণ নেন।এদিকে, আসামী পক্ষের আইনজীবি হিসেবে মির্জা সারোয়ার হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি আমিনুর রহমান, আইনজীবী আজিজার রহমান আজু, আবু বক্কর সিদ্দিক, আলী আসমান বিপুল সহ ১৫ জন অংশ নেন।আসামীপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, এজহার নামীয় আসামী নুরুল ইসলাম সুজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানী ছিল।

 রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ঘটনার সময় সুজন মোবাইল ফোনে গুম ও পরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা শুনানীতে বলেছি বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই রেকর্ড বের করা সম্ভব। মামলার বাদী আমাদের একটি এফিডেভিট দিয়েছেন এবং সেখানে তিনি বলেছেন, আসামী সুজনকে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে চেনেন না। তার সাথে কোন শত্রুতা নেই। দীর্ঘ শুনানীতে আমরা তার জামিনের আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করি, তিনি ন্যায় বিচার পাবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি বলেন, এটি রহস্যাবৃত। ভিকটিমের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটনের জন্য এই মামলায় আসামীর রিমান্ড প্রয়োজন ছিল। এটি আদালত অনুধাবন করেছেন। বিধায় আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আর আসামী পক্ষ যে এফিডেভিট দেখিয়েছে আদালতে তাতে কোন সাক্ষীর সাক্ষর নেই। এতে প্রতিয়মান হয় যে সেটি সাজানো। আগামী দিনে এই মামলায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। প্রসঙ্গত: পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪ আগষ্ট থেকে গুম হয় আল আমিন। এ ঘটনার পর আল আমিনের পিতা মনু মিয়া গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ ইং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন সহ ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর পঞ্চগড় থানা পুলিশ এ মামলায় শ্যোন ওয়ারেন্ট জারী করেন।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত