পেমেন্ট ইস্যু শুধু বিপিএলকে ছোট করে না, দেশ নিয়েও বাজে বার্তা যায়: তামিম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০৩ |  আপডেট  : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৩৬

বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাইয়ে বিসিবিকে খুবই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিলেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ফরচুন বরিশালের বিদেশি ক্রিকেটারদের চুক্তির ব্যাপারটি বেশির ভাগ সময় নিজেই দেখভাল করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার দলের এই সমস্যা না থাকায় তাকে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। তবে অন্য দলগুলির পারিশ্রমিক সমস্যা যে গোটা টুর্নামেন্টকেই নেতিবাচক চেহারা দিচ্ছে, সেটি তিনি অনুভব করছেন। দেশের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের মতে, ক্রিকেটের সীমানা ছাড়িয়ে দেশে ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এসব কারণে।

বিপিএলের প্রথম আসর থেকেই খেলছেন তামিম। প্রথম দুই আসরে পারিশ্রমিকের সমস্যায় এই টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি প্রবল সঙ্কটে পড়েছিল। তামিম নিজেও ভুক্তভোগী ছিলেন। চিটাগং কিংসের বর্তমান কর্ণধারদের কাছ থেকেই তিনি পারিশ্রমিক পাননি সেবার। পরে বিসিবির কাছ থেকে কিছু অংশ পারিশ্রমিক পেয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।

২০১৫ আসর থেকে গত আসর পর্যন্ত বিপিএলে নানা ঘাটতি, প্রশ্ন, কমতি থাকলেও পারিশ্রমিকের সমস্যা সেভাবে বড় হয়নি কখনোই। কিন্তু এবার দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংস পারিশ্রমিক নিয়ে গড়িমসি করায় বিপিএল যেন ফিরে গেছে সেই ১২-১৩ বছর আগে।

তামিমের এখনকার দলে এই সমস্যা নেই। তবে টুর্নামেন্টকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করার একটি পথ তিনি বাতলে দিলেন ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে।

“আমি চাই যে, বিপিএল অনেক ভালো করুক। বিপিএলের নাম হোক অনেক। একটা সময় আমরা সত্যিই অনেক দ্রুত এগোচ্ছিলাম। কিন্তু এসব দিক থেকে (পারিশ্রমিক) ক্রিকেট বোর্ডকে খুব সতর্ক হতে হবে। টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি কী হচ্ছে না হচ্ছে, শুধু এসবের ব্যাপার নয় এটা। যখন আপনি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাই করবেন, তখন অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যে কাকে দল দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন না… যাতে এরকম পেমেন্ট ইস্যু না আসে।”

“একটা দল যদি পেমেন্ট করতে না পারে এবং পরে কোনো ক্রিকেটারকে বলা হলো যে, ‘৫০ শতাংশ নিয়ে নাও’… এটা কিন্তু অতীতে হয়েছে। অনেক সময় দেখা গেছে, হয়তো ৫০ শতাংশ বাকি ছিল, এরপর একটা দরকষাকষি হয়ে ক্রিকেটাররা ২৫ শতাংশ পেয়ে খুশি মনে চলে যায়। কিন্তু দোষ তো এখানে ক্রিকেটারের না, ভুল থাকলে এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজির থাকবে আর বিসিবির থাকবে।”

তামিমের আশা, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য হলেও এবারের আসর শেষ হওয়ার আগেই ব্যাপারটির সুরাহা করবে বিসিবি।

“এখনও যেহেতু টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায়নি, আমি নিশ্চিত যে, তারা (বিসিবি) এটা সমাধানের চেষ্টা করছে। আশা করব, এরকম কিছু যাতে না হয়। কারণ, এটা শুধু বিপিএল টুর্নামেন্টকেই ছোট করে না, আমাদের দেশের ব্যাপারেও একটা বাজে বার্তা যায়। অনেক বিদেশি ক্রিকেটার আছে, যারা আসতে চায়। কিন্তু এরকম হলে তখন সমস্যা হয়।”

“এজন্যই যখন ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাই করা হয়, তখন যেন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়।”

২০২০ আসর থেকে বিপিএলে টানা পঞ্চমবার অংশ নেওয়া ফরচুন বরিশালের পারিশ্রমিক নিয়ে তেমন অভিযোগ কখনও শোনা যায়নি। গত আসরে তারা প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে। বিপিএলের বাইরেও বছরজুড়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় দেশের সাবেক এই অধিনায়কের। তার মতে, পেশাদারিত্ব আনতে পারলে এখনও বিপিএলের সামনে সম্ভাবনা আছে প্রস্ফুটিত হওয়ার।

“আমি একটা সুবিধা পেয়ে যাই এক্ষেত্রে যে, ফরচুন বরিশালের পেমেন্ট গত চার-পাঁচ বছরে খুব ভালো ছিল। এখনও পর্যন্ত তারা খুবই ভালো। নিয়মিত পেমেন্ট করছে। ওরাও (বিদেশি ক্রিকেটাররা) তাই বিশ্বাস রাখে।”

“আমার মনে হয়, এই টুর্নামেন্ট বেড়ে ওঠার অনেক বড় সুযোগ এখনও আছে। অনেক বড় হতে পারবে এই টুর্নামেন্ট। এত দর্শকের আগ্রহ আছে, খেলা দেখার প্রতি ঝোঁক আছে, আমরা যদি কাজগুলি ঠিক করে করি, যদি সঠিক ব্যক্তিদের বেছে নেই, কীভাবে এটা চলবে, সেটা যদি ঠিক করতে পারি, এই টুর্নামেন্টের অনেক সম্ভাবনা আছে।”

ড্রাফট থেকে নেওয়া বা চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ফ্র্যাঞ্চাইজি শেষ পর্যন্ত না দিলেও সেটির নিশ্চয়তা আছে। পরে হলেও বিসিবি তা দিয়ে দেবে। তবে ড্রাফটের বাইরে চুক্তি করা স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনেকেই প্রাপ্য পারিশ্রমিক শতভাগ পায় না।

এখানেও সমাধানের একটি পথ দেখালেন তামিম।

“ড্রাফটের বাইরে বা সরাসরি যাদেরকে নেওয়া হচ্ছে, এটারও যদি একটা চুক্তি থাকে, যে চুক্তিপত্রের একটি কপি আমি নিজের কাছে রাখব, একটি বিসিবিকে দেব, একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থাকবে, তাহলে অন্তত বিসিবির জানা থাকবে যে কতটা পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে। এটা করতে পারলে আমার মনে হয়, সমস্যাগুলো হবে না।”

“যেটা বললাম যে, এই টুর্নামেন্টের বিশাল সম্ভাবনা আছে, আমরা স্রেফ ঠিক কাজগুলি করছি না।”

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত