১০৯ সংসদ সদস্য এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু ৪

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৩২ |  আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:১৫

হঠাৎ জ্বর আসায় করোনার সংক্রমণ হলো কি না, এই ভেবে নমুনা পরীক্ষা করান রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। ১৪ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পর বুঝতে পারেন, তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। পরে দ্রুত রাজশাহী থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। এখন হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ করোনার টিকা নিয়েছিলেন তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গণমাধ্যমকে বলেন, ‍দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকায় করোনা কুপোকাত করতে পারেনি। তেমন কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি।

জাতীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে সর্বশেষ করোনায় আক্রান্ত হন ফজলে হোসেন বাদশা। সংসদ সচিবালয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১০৯ জন সাংসদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। আর মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ সদস্য, এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ১২ জন।  প্রসঙ্গত, সংরক্ষিত ৫০ জনসহ সংসদের সদস্য মোট ৩৫০ জন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ১৩ জুন মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম। একই দিনে মারা যান টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ। আর জুলাইয়ে মারা যান নওগাঁ-৬ আসনের সাংসদ ইসরাফিল আলম। সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল মারা গেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কুমিল্লা-৫ আসনের সাংসদ আবদুল মতিন খসরু। এর আগে গত মাসে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। আর সাংসদদের মধ্যে প্রথম করোনায় সংক্রমিত হন নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ ও সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার। গত বছরের ৩০ এপ্রিল তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। এরপর গত নভেম্বরে তিনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হন। তাঁর মতো আরও দুজন সাংসদ দুবার করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা হলেন টাঙ্গাইল-২ আসনের ছোট মনির ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ তানভীর শাকিল জয়।

গত বছরের ১২ নভেম্বর উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে ঢাকায় ফেরার পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় সাংসদ তানভীর শাকিলের। এরপর চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেন। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার আগেই ৫ এপ্রিল তাঁর আবার করোনা শনাক্ত হয়।

তানভীর শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমবার জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, দুর্বলতা ছিল। কিন্তু এবার তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার কারণেই হয়তো এবার তেমন কোনো জটিলতা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে একজন করে সাংসদের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর জুনে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ জনে। জুলাইয়ে ৬ ও আগস্টে ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ৫ জন করে শনাক্ত হলেও নভেম্বরে সর্বোচ্চ ২২ জনের করোনা শনাক্ত হয় ।এরপর টানা তিন মাস এটি কমতে থাকে। ডিসেম্বরে ৮ জন, জানুয়ারিতে ৩ ও ফেব্রুয়ারিতে ৬ জন সাংসদের করোনা শনাক্ত হয়। এ বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে ১৪ জন সাংসদ আক্রান্ত হন এতে। আর চলতি মাসে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র বলছে, প্রতিটি সংসদ অধিবেশনের আগে সবার করোনা পরীক্ষা করাটা বাধ্যতামূলক। এতে দেখা গেছে, উপসর্গ ছাড়াও অনেকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ সংসদ অধিবেশন বসে ১ এপ্রিল। এর আগে করোনা নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শনাক্ত হন। এ ছাড়া ১৭ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আগে বাধ্যতামূলক নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে কারও কারও করোনা শনাক্ত হয়। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৫ মার্চ নমুনা পরীক্ষা করার পর ২৬ মার্চ করোনা শনাক্তের তথ্য পান গাজীপুর-৪ আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি। নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিতভাবে করোনায় আক্রান্তদের পাশে থেকে এক বছর ধরে কাজ করেছেন তিনি।

সিমিন হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব কাজ করেছেন। সব সময় সতর্ক ও সচেতন থাকার চেষ্টা করেছেন। নমুনা পরীক্ষার পরদিন সন্ধ্যায় জ্বর আসে। এর কিছুক্ষণ পরই করোনা শনাক্তের কথা জানতে পারেন। তবে বড় ধরনের কোনো জটিলতা হয়নি তাঁর। গত ২০ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন তিনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত