হাটাহাজারীর ঘটনা হয়েছে, যার জন্য আমরা বেশি দুঃখিত: বাবুনগরী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩০ |  আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০২

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সংঘাতের জন্য প্রথমবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেছেন, ‘কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। কেউ কেউ গুজব ছড়াচ্ছে, হেফাজতের উদ্দেশ্য অমুক দলকে ক্ষমতায় বসানো, নাউজুবিল্লাহ।' সরকারকে এ ধরণের গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধও করেছেন বাবুনগরী।

জ্বালাও-পোড়াওসহ যেকোনো ধরণের সংঘাতকে হেফাজতে ইসলাম হারাম মনে করে বলেও জানিয়েছেন একযুগ আগে প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদরাসাভিত্তিক এ সংগঠনের প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরী।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) ফেসবুকের মাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী এ সব কথা বলেছেন। 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় হতাহত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডব, নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়া, পরবর্তীতে মামুনুল হকসহ কয়েকজন হেফাজত নেতা গ্রেফতারসহ সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বাবুনগরী।

বার্তায় সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বাবুনগরী বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ জুমাবার কিছু দুর্ঘটনা হয়ে গেছে। অথচ ২৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমাদের কোনো কমান্ড ছিল না। আমি নিজে হাটাহাজারী মাদরাসায় ছিলাম না, দূরে সফরে ছিলাম। এর আগে বায়তুল মোকাররমেও কিছু ‍মুসল্লী আর ক্যাডারের মাঝখানে কিছু অঘটন হয়েছে। ক্যাডাররা মুসল্লিদের মারধর করেছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে।'

এরপর হাটাহাজারীর ঘটনা হয়েছে, যার জন্য আমরা বেশি দুঃখিত, বলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

এর ধারাবাহিকতায় তিনি আরও বলেন, ‘আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিছু ঘটনা হয়েছে। মোট কথা হল, এসব কোনো ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি ছিল না, কোনো কমান্ড ছিল না।'

নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী আসা উপলক্ষে আমাদের হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কিছু কিছু বক্তারা তাদের বক্তব্যে কিছু কথা বললেও কিন্তু মোদী আসার ব্যাপারে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না।’

হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্যে বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজত একটি শান্তিপূর্ণ, অরাজনৈতিক দল। সমস্ত মুসল্লি, ওলামায়ে-কেরাম হেফাজতের সদস্য। সমস্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক হেফাজতের সদস্য। সবাইকে নিয়ে হেফাজত করতেছি। হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য আকিদা, ঈমান, দ্বীন, ইসলামকে রক্ষা করা। মুসলমানদের আকিদা, দ্বীন রক্ষা করা হেফাজতের উদ্দেশ্য।’

হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ২০১০ সালে। গত ১১ বছরে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না, অমুক পার্টির সাথে হেফাজতের সম্পর্ক ছিল। কেউ ইনশাল্লাহ প্রমাণ দিতে পারবে না। কাউকে ক্ষমতায় বসানো, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজত ইসলামের উদ্দেশ্য নয়, পরিষ্কার ভাষায় বলে আসতেছি। কোনো পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়, পরিষ্কার ভাষায় বলে আসতেছি। হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর জমিনে রাসুল (সা.) এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। কোনো পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা নয়। এই হল হেফাজতের অবস্থান।’

হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ‍গুজব রটানোর অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কিছু কুচক্রীমহল নানাপ্রকার গুজব রটাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনারা এই গুজবে কান দেবেন না। কেউ কেউ ‍গুজব ছড়াচ্ছে যে- হেফাজতের উদ্দেশ্য হল অমুক অমুক দলকে ক্ষমতায় বসানো, নাউজুবিল্লাহ, এটা ডাহা মিথ্যা কথা, নির্জলা মিথ্যাচার। মাননীয় সরকারকে আমি বলব, আপনারা এসমস্ত গুজবে কান দেবেন না।’

হেফাজতের নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করে বাবুনগরী বলেন, ‘প্রশাসন মাহে রমজানের মধ্যে আমাদের নেতাকর্মীদের, হক্কানি, ওলামা-কেরামকে, তৌহিদি জনতাকে হয়রানি করছে, গ্রেফতার করছে বেধড়কভাবে। মানুষ পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরছে গ্রেফতার-হয়রানির ভয়ে। ইফতার করতে আসলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেহেরি করতে আসলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বশীরউল্লাহকে তারাবির নামাজ পড়ার সময় ধরে নিয়ে গেছে। কেমন হয়রানি, কেমন জুলুম নির্যাতন! এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না।’

‘হাটহাজারী মাদরাসার আশপাশে এলাকাবাসি কেউ ঘরে নাই। অথচ তারা এই আন্দোলনে ছিলই না, তারা আমার এলাকাবাসি, আমি জানি। সমস্ত ঘর খালি। এভাবে যদি নির্দোষ মানুষ এবং হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের, হক্কানি ওলামা-কেরামকে, তৌহিদী জনতাকে বেধড়ক ধরপাকড় করা হয়...। একদিকে মাহে রমজান, আবার লকডাউন, ইফতার করতে আসতে পারতেছে না, সে ইফতার কিভাবে করবে, রোজা কিভাবে রাখবে, সেহেরি কিভাবে খাবে? অবিলম্বে এই ধরপাকড়, গ্রেফতারি, মিথ্যা মামলা, হয়রানি বন্ধ করুন। মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেককে হয়রানি করা হচ্ছে, বন্ধ করুন।’

আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিব, ইলিয়াস হামিদীসহ গ্রেফতার হেফাজতের কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে তাদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেসব ওলামা-কেরামসহ নির্দোষ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে নিঃশর্তে মুক্তি দান করুন। ২০১৩ সালের মামলায় আট-নয় বছর পর গ্রেফতার করা হয়েছে। এতদিন কোথায় ছিলেন আপনারা? ২০১৩ সালের মামলাগুলো সাজানো, ডাহা মিথ্যা। এসব মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিন।’

হেফাজতে ইসলাম সংঘাত চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, অশান্তি, জঙ্গিবাদ- এসব আমরা চাই না। ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম নয়, শান্তির ধর্ম। হেফাজত শান্তিশৃঙ্খলা চায়, অশান্তি চায় না। বিশৃঙ্খলা চায় না। হেফাজত সংঘাতে যেতে চায় না।'

হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আপনারা সবুর করুন। কোনো সংঘাতে যাবেন না। কোনো ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ে যাবেন না। হেফাজতে ইসলাম ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করে না, বরং হারাম মনে করে। জায়েজও মনে করে না। সবুর করুন আপনারা। বালা-মুছিবতে ধৈর্য ধারণ করুন। খবরদার, কোনো জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর করবেন না। কোনো সংঘাতে যাবেন না। এটা আমার নসিহত হেফাজতের নেতাকর্মীদের কাছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন বসে বসে।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত