স্কুল-কলেজ থেকে বাদ পড়ছে শেখ হাসিনার নাম

প্রকাশ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ | আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ১৭:০৬

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারে নামে থাকা ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবার শেখ হাসিনার নামে থাকা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামও পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
শুধু শেখ হাসিনা নয়, জুলাই গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামও পরিবর্তন করা হবে। শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে থাকা সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং নাম পরিবর্তনের কারণসহ প্রস্তাবনা পাঠাবে। পরে নীতিমালার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে।
গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা পরিষদে। গত অক্টোবর মাসে নেয়া সেই সিদ্ধান্তের আলোকে গত ১২ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদে শেখ মুজিবুর রহমান ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন নামকরণ করা হবে এলাকা ও বাংলাদেশের নাম অনুসারে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নামও পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়।
দপ্তরগুলোর সূত্র মতে, তালিকা করার ক্ষেত্রে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার নামে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নামও পরিবর্তন করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধরা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে বিষয়টি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে তার মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে তালিকা করার জন্য ডিসি ও ইউএনওদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
২০১৭ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জন্য আগের নীতিমালাকে আরও যুগোপযোগী করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে গভার্নিং বডির অনুমোদন এবং দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নাম পরিবর্তনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য (স্কুল, কলেজ ও ডিগ্রির ক্ষেত্রে) জেলা প্রশাসককে (ডিসি) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন, মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে পৃথক কমিটি গঠন এবং উক্ত কমিটি প্রাথমিকপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে উচ্চ কমিটির কাছে সুপারিশ করবে।
প্রাথমিক স্কুলের নাম পরিবর্তনের জন্য সর্বশেষ ২০২৩ সালে নতুন একটি নীতিমালা করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক এবং শিশুমনে ও জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে— এমন বিবেচিত হলে তা বদলানো যাবে। বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ হয়ে থাকলে বা আদালতের বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকলে বদলানো যাবে। ভূমিকম্প, নদীভাঙনসহ নানাবিধ কারণে বিদ্যালয়ের নামের দ্বৈততা বা জটিলতা দেখা দিলে নাম বদলানো যাবে।
নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে এলাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা যাবে। তবে রাষ্ট্রবিরোধী, ফৌজদারি, দেওয়ানি ও দুর্নীতির অপরাধে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্তদের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা যাবে না। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে এলাকার নাম অনুসারেও নামকরণ করা যাবে। স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যতাসাপেক্ষে নাম পরিবর্তন করা যাবে।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত