গ্যাসের বাধাহীন সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি আইটিইটি’র

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৮ মে ২০২৫, ১৮:০০ |  আপডেট  : ৯ মে ২০২৫, ০০:৪১

২০২৫-২০২৬ বাজেটে টেক্সটাইল খাতকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করে এই শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে  পেট্রোবাংলাকে প্রয়োজনীয় ভতুর্কী প্রদানের ব্যবস্থা ও গ্যাসের বাধাহীন সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য সময়মতো প্রয়োজনীয় এলএমজি আমদানি করে সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য দাবি জানিয়েছে দি ইন্সটিটিউশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড টেকনোলজিস্টস (আইটিইটি), বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল ২০২৫) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে সংগঠনের প্রাক বাজেট সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

এ সময় আইটিইটি আহ্বায়ক ইঞ্জিঃ এহসানুল করিম কায়সার, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জি. এটিএম সামসুদ্দীন খান,  সদস্য ইঞ্জি. সহিদুর রহমান, অজীবন সদস্য ইঞ্জি. রওশন জামিল টিপু, সদস্য ইঞ্জি সুমায়েল মো. মল্লিক, ইঞ্জি. এ এসএম হাফিজুর রহমান নিস্ক্রন, ইঞ্জি. খালেদুল ইসলাম মিথুন, ইঞ্জি এস এম মিজানুর রহমান, ইঞ্জি. নজরুল ইসলাম, ইঞ্জি. আহসান হাবিব, ইঞ্জি. শেখর চন্দ্র দাস, ইঞ্জি. আশিক ইসতিয়াক লিখন, ইঞ্জি. আরফান আলী পি কে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. এনায়েত হোসেন বলেন, শিল্প অঞ্চলে ধারাবাহিক গ্যাস সরবরাহ এবং চাপের মাত্রা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা আপগ্রেড, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন কূপের সন্ধানে খননপ্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি। নতুন শিল্পে গ্যাস সংযোগের এর মূল্য পুরাতন শিল্পের ন্যায় একই মূল্য নির্ধারন করা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে প্রচলিত রপ্তানির উপর শুল্ক হিসেবে ১% হিসেবে অওঞ প্রদান করতে হয়, পূর্বে যা ০.৩০% বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে রপ্তানিতে মন্দাভাব ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রতিযোগিতায় বাণিজ্যে টিকে থাকার জন্য এই হার ০.২৫% নির্ধারণ করা হউক।

বর্তমানে দেশে প্রচুর পরিমাণে অপ্রদর্শিত টাকা বিদ্যমান। এছাড়া ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও এই অপ্রদর্শিত টাকা রয়েছে। টাকা পাচার রোধ এবং দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষে রপ্তানীমুখী শিল্পে বিনা বাধায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এই পদক্ষেপের ফলে দেশের শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। দেশের টেক্সটাইল শিল্পে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের নামে বিদেশী নিয়োগ দিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ক্লোর লেভেলের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বৈদেশিক মূদ্রায় তাদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ফলে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারও কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনতিবিলম্বে সকল অপ্রয়োজনীয় বিদেশি নিয়োগ বাতিল, ওয়ার্ক পারমিট ব্যতীত বিদেশি নিয়োগ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। রপ্তানিমুখী বস্ত্র শিল্পখাতের জন্য ব্যাংক সুদের হার সর্বোচ্চ ১০% করে অন্যান্য ব্যাংকিং চার্জ কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের প্রস্তাব করছি।

তিনি আরো বলেন, রপ্তানিমুখী বস্ত্র শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ ও ডাইস- ক্যামিক্যালস আমদানিতে বিভিন্নপ্রকার কর, ভ্যাট ইত্যাদি বিদ্যমান যা সম্পূর্র্ণ রহিত করার প্রস্তাব করছি। পাট ও বস্ত্রখাতে গবেষনা, উচ্চশিক্ষিত প্রকৌশলী সরবরাহ করার লক্ষ্যে গঠিত একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস খুবই ছোট এবং এখানে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা প্রবলভাবে বিদ্যমান। এই সমস্যা সমাধানকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পূর্বাচল প্রকল্পে বা তার আশেপাশে ৫০ একর জমি বরাদ্দের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের নিকট আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া টেক্সটাইল শিক্ষা ও গবেষণার কাজে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে সূতা এবং কাপড় উৎপাদনের জন্য আমদানিকৃত তুলার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তবে তুলা সংগ্রহের বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব, কাস্টসম হয়রানি এড়ানোর নিমিত্তে তুলা ডাম্পিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ফ্রি জোন করে গুদামজাত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে রপ্তানীমুখী টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য বর্তমান প্রচলিত প্রনোদনা পণ্যভেদে শতকরা ১০-২০ ভাগে উন্নতি করার দাবি জানাচ্ছি।

১০০% রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল সেক্টরে কাষ্টমস্ এবং বন্ডের ওয়্যার হাউজের মধ্যে বিরাট গ্যাপ আছে। রপ্তানিমুখী বিশেষ করে ডাইং ফিনিশিং কোম্পানীগুলো সঠিক নিয়মে কাজ করার জন্য বন্ডের ওয়্যার হাউজের নীতিমালার পরিবর্তন করার দাবি জানাচ্ছি।

সরকার রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সোলার প্যানেল এর ট্যাক্স হলিডে ফ্যাসিলিটিজ প্রদান করছে। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় চাহিদা পূরণের জন্য অসংখ্য টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানা গড়ে উঠেছে। ২০৩০ সনের মধ্যে কার্বনের মাত্রা ৪২% নামিয়ে আনতে হলে সকল কারখানাকেই সোলার সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের মধ্যে কার্যকর এবং উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কারখানা যেমন রয়েছে তেমনি অনেক দুর্বল ও অকার্যকর কারখানা রয়েছে যেগুলো অপেশাদার, অদক্ষ, পুরোনো ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এই কারখানাগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য, উৎপাদন দক্ষতা, পরিবেশগত সামঞ্জস্য এবং শ্রমিকের কল্যাণের প্রয়াসে কার্যকর ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, আর্থিক বিশ্লেষক, অপরেশনাল বিশেষজ্ঞ, সরকারের প্রতিনিধি এবং আইনি উপদেষ্টার সমন্বয়ে শিল্প মূল্যায়নের টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জনাচ্ছি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসগুলোতে কমার্শিয়াল উইং এ ন্যূনতম একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি যাতে করে বাইরের দেশ থেকে রপ্তানির অর্ডার নিশ্চিতের জন্য টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া যায়।

বর্তমানে বাংলাদেশ-এর টেক্সটাইল সেক্টরের চাহিদা মোতাবেক প্রচুর পরিমাণে ডাইস-ক্যামিক্যাল এবং মেশিনারিজ আমদানি করতে হয় । সরকারি উদ্যোগে ডাইস-ক্যামিক্যাল ও মেশিন ম্যানুফেকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং নতুন কর্মস্থানের সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত