সাহিত্যের সেকাল একাল : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

  সুহিতা সুলতানা

প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২১, ১৫:৫৪ |  আপডেট  : ৩ মে ২০২৪, ০৫:৫৬

সাহিত্যের জায়গাটিতে খুব সৎ ও নির্মোহ থাকতে হয়। এখানে যদি কেউ গোপনে রাজনীতি করে তা আরও ন্যাক্কারজনক। কারো রাবার স্ট্যাম্প হয়ে থাকলে আর যাহোক লেখক হওয়া যায় না। সত্যকথা বলার সৎ সাহসও থাকতে হয়। সাহিত্যের একাল সেকাল বিশ্লেষণ করলে একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসে। কাউকে স্নেহ করলে সেই সুযোগটা নিয়ে সে রাজনীতি করে অন্যের কাছে ভালো হবে; এটা আবার কেমন সিস্টেম! একজন ক্ষমতা পেয়ে দিনের পর দিন স্বেচছাচারিতা করবে, সিনিয়র জুনিয়র লেখকদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি ফেঁদে তাকে অপ্রস্তুত করবে তারচে প্রকাশ্যে সত্য বলা ভালো। ভালোবাসলে থাকবে না হলে যাবে। কৃতঘ্নদের মুখোশ উন্মোচিত হলেই ভালো । তাতে সাহিত্যের দেহ ভাইরাস মুক্ত থাকে।

(২)

১৩ জুন ২০২০ অনলাইন শিল্পচিন্তার লাইভে আড্ডায় সাহিত্যের অনেক বিষয় উঠে এসেছে। যেখানে সবাই সাহিত্যের নানা দিক এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি আমরা। কাউকে খুশী করার জন্য তো নিশ্চয় এ আয়োজন নয়! সাহিত্যের ভেতরে যদি রসিকতা না থাকে সে সাহিত্যেরও অপমৃত্যু হয় ।

(৩)

অকৃতজ্ঞ মানুষ সম্পর্কে ধারণা মানুষ জেনে যাওয়াই ভালো তাহলে সেটা স্বাস্হ্যসম্মত। ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে না। আমি মানুষটি কেমন তা সবাই জানে। যার যার উপকার করেছি পরবর্তীতে তারাই আমার ক্ষতি করেছে। সেটা লেখালেখির ক্ষেত্রেও হয়েছে চাকরির ক্ষেত্রেও হয়েছে। এটা নাকি নিয়ম! যার উপকার করবা সে তোমার ক্ষতি করবেই। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যারা সংগঠন করে দল করে তাদের জীবনও সুখকর হয় না!

(৪)

সাহিত্যের সেকাল নিয়ে কথা বললে যে আলোকিত মুখগুলো সামনে চলে আসে তাঁদের নামগুলো আমি বারবার বলি একারণেই এখন সাহিত্যাঙ্গনে কী হচেছ তা বর্তমান প্রজন্মের মেধাবী লেখকরা জানুক। কবি শামসুর রাহমান,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শিবনারায়ণ রায়, দাদাভাই, বেলাল চৌধুরী, আবুল হাসনাত, রশীদ হায়দার, সুশান্ত মজুমদার, হেলাল হাফিজ, মঈনুল আহসান সাবের, আবু হাসান শাহরিয়ার, মল্লিকা সেনগুপ্ত এঁরা যখন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকা, সাময়িকীর (সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দেশ (কলকাতা), জিজ্ঞাসা (কলকাতা), ভারতবিচিত্রা, সচিত্রসন্ধানী, সানন্দা (কলকাতা),  উত্তরাধিকার (ত্রৈমাসিক বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত), দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক দেশ, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক আজকের কাগজ) পাতাগুলো সম্পাদনা করতেন তখন আমি ডাকে লেখা পাঠাতাম। লেখার মানই বিবেচিত হতো, ব্যক্তি নয় । তাঁদের সাথে আমার দেখা হয়েছে অনেক পরে । সেখানে ব্যক্তি সম্পর্কের কোনো বিষয় ছিল না। যা এখনকার সাহিত্য সম্পাদকদের কাছে হয়তো অবিশ্বাস্য মনে হবে। এরকম একটি সুসময় আমরা পেছনে ফেলে এসেছি ।

(৫)

বর্তমান সময়ে ‘কালি ও কলম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পত্রিকা। দৈনিক সংবাদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে হাসনাত ভাই ‘কালি ও কলম’ সাহিত্য পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগদান করলেন। এখন ইমেলে লেখা পাঠাই ছাপা হয়। কখনো তো হোঁচট খেতে হয়নি। হাসনাত ভাই যখন সংবাদে ছিলেন তখন সাময়িকীর

পাতায় কতো গুরুত্ব সহকারে কবিতা প্রকাশ করতেন। হাসনাত ভাই এখনও আগের মতই স্নেহ করেন। তিনি মানুষ হিসেবে মহৎ, নিমোর্হ, সুবিবেচক। বেলাল ভাই কবি বেলাল চৌধুরী আজ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর নিকটও আমার অশেষ ঋণ। তখন কেবল কলেজে পড়ি, যশোরে থাকি ডাকে লেখা পাঠাই ভারত বিচিত্রার ঠিকানায়, বেলাল ভাইকেও তখনও দেখিনি তিনি কতো গুরুত্বসহকারেই না কবিতা ছাপতেন। সুনীলদা (কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) যখন দেশ পত্রিকায় ছিলেন তখন ইমেলের চল ছিল না। সাহস করে ডাকে লেখা পাঠিয়ে দিলাম, অপেক্ষা করতে থাকি হঠাৎ একদিন ‘দেশ’-এ কবিতা ছাপা হয়ে যায়। আনন্দে আমার চোখে জল চলে আসে। শ্রী শিবনারায়ণ রায় সম্পাদিত ‘জিজ্ঞাসা ’ অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটি সাহিত্য ম্যাগাজিন হিসেবে সুধীমহলের কাছে ছিল আদরণীয়। তাঁকে আমি শিবুদা ডাকতাম ,কতো স্নেহ করতেন তাঁর কথা মনে হলেও ভাবি তাঁরা হয়ত দেবতা ছিলেন। ‘জিজ্ঞাসা’য় যখন লেখা প্রকাশিত হলো তখন আমি অনার্সে পড়ি। যশোরের দিনগুলোও ছিল বর্ণাঢ্যময়। যেন কবিতার শহর যশোর। কবি আজীজুল হক পঞ্চাশের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি। যশোরেই ছিলেন সারাটা জীবন। আমাদের ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য পড়াতেন। মনে হতো রাবণ, সীতা, রাম লক্ষণের সামনে বসে আছি। এম,এম, কলেজের স্মৃতিও কম নয়। বড়ভাই কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের অবদান কম নয় আমার কবি হয়ে উঠার পেছনে। তাঁকে দেখতাম সারা রাত জেগে পড়তো সেটি পাঠ্যপুস্তক নয় মাকর্স, লেনিন, বোদলেয়ার, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সুনীল গাঙুলী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা বই। আমার বেড়ে উঠাটা এরকম ছিল ।

খুব ভালো লাগা ও একধরণের কষ্ট থেকে এ বিষয়ের অবতারণা। এখন কোনো সাহিত্য সম্পাদক আমার লেখা না ছাপলে না চাইলে আমার কী করার আছে? ব্যক্তিস্বার্থই যদি সাহিত্যের মূল মানদণ্ড হয় তাদের কাছে সেক্ষেত্রে আমার কী করার থাকতে পারে। আমি নিজেও আর সম্মান নষ্ট করে দৈনিকের সাহিত্যপাতায় লিখতে চাই না। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে ইতোমধ্যে। সব সহ্য করা যায় অসম্মান সহ্য করা যায় না ।

(৬)

মজার একটি বিষয় না বললেই নয়, গতরাতে (১৩ জুন ২০২০)

শিল্পচিন্তার লাইভ চলাকালীন হোস্ট কবি মোমেনের বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অফসিন হয়ে যায়, এদিকে গিরীশ ও মোমেনকে আর দেখতে পাচিছলাম না। রয়ে গেলাম আমি আর শিপলু। ইতোমধ্যে ফোন এলো গিরীশের। আমরা খুব মজা পাচিছলাম এ অনুষ্ঠানে কথা বলে, হাসতে হাসতে গিরীশকে বললাম ওবায়েদ এবার সাইজ হবে। এটা ভালোলাগা থেকে হতে পারে, ব্যক্তির ব্যবহারের কারণেও হতে পারে। থাক বিমূর্ত। পরে বলা যাবে বিস্তারিত। সাহিত্যে যদি রস না থাকে তাহলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত