সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের গুলাগুলি, আহত ৩

  কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১৫:৪০ |  আপডেট  : ১৮ জুন ২০২৫, ১৭:৫৮

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সার্চ কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। এসময় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত দশটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের গো-হাট সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেখানে প্রথমে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম পোহায়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গুলির খোসা ও ৪টি তাজা গুলি উদ্ধার করেছে।

বুধবার (১৮ ) সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। থানায় কেউ অভিযোগও দেয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য মঙ্গলবার বিকেল চারটায় ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির সমন্বয়ে ওয়ার্ড কমিটির ভোটার তালিকা গঠনের প্রস্তুতি চলছিল। রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে সার্চ কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম সরকার, আসাদুজ্জামান মিঠু ও শামসুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা ছিলেন। সেখানে রবিউল ও আসাদুজ্জামানের সঙ্গে শামসুলসহ তার পক্ষের বিরোধ দেখা দেয়। বৈঠকের শেষ মুহূর্তে হঠাৎ সেখানে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এতে চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের লোকজন দুইদিকে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়।

সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় সংঘর্ষে একপক্ষের বিএনপি কর্মী হামিদুল ও আরিফ আহত হন। অপর পক্ষের বিএনপি কর্মী টিপু আহত হন। তাদেরকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন, বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে যার মতো সভাস্থল ত্যাগ করে। ঠিক সেই মুহূর্তে সার্চ কমিটির সদস্য শামসুলসহ তার লোকজন হামলা চালায়। তারা গুলি ছোড়ে। এতে তাদের দুই কর্মী আরিফের মাথায় ও হামিদুলের ডান হাতের কনুইতে গুলি লেগে আহত হন।

ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম সরকার বলেন, শামসুল ইসলাম খুবই বেপরোয়া আচরণ করেন। তিনি তার ছেলেসহ অন্যদের দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছেন। আমরা কোনোভাবেই এই হামলার সঙ্গে জড়িত না।

অপরদিকে ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির সদস্য শামসুল বলেন, ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হওয়ার কারণেই মূলত এই নাটক শুরু করেছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটেছে। মিটিং শেষে আসাদুজ্জামান মিঠু আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আমি চলে আসার পরই মূলত এই ঘটনা ঘটে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওরা মূলত আমাকে আর আমার ছেলে রাজনকে টার্গেট করেছে। আজকের এই ঘটনা আসাদুজ্জামান মিঠু, রবিউল সরকার আর ধরমপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক নান্টুর নেতৃত্বে ঘটেছে। তারা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকাশের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকাশের বোন চাঁদনী খাতুন বলেন, লুটপাটকারীরা বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সোনার গহনা ও টাকা লুট করেছে। আমার ভাই সবেমাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে। কেন আমার এত বড় ক্ষতি করলো, আমি এর বিচার চাই।

ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, একজন মাথায় ও আরেকজন হাতের কনুইতে আঘাত নিয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কনুইয়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।

ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সার্চ কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। তিনজন আহত হয়েছেন। তবে তারা গুলিতে আহত হননি। ঘটনাস্থল থেকে গুলির ৫টি খোসা ও ৪টি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এ বিষয়ে থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত