সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানকারীদের উদ্বুদ্ধ করবে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর : প্রধানমন্ত্রী

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:২৬ |  আপডেট  : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর (বিএমএম) দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি শিশুদেরও অনুপ্রাণিত করবে। ‘বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর থেকে তরুণ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনী-সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে যোগদানে এবং দেশপ্রেমে তরুণরা উদ্বুদ্ধ হবে।’

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বিজয় সরণি বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর অবস্থিত। জাদুঘরটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য সংক্রান্ত নিদর্শন ও বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রের সংগ্রহ নিয়ে জাদুঘরটি সজ্জিত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর প্রান্তে আরও বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর মধ্যে এটা হবে সর্বশ্রেষ্ঠ আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন একটি সামরিক জাদুঘর। সেভাবেই এটা তৈরি হোক, সেটাই চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। তাছাড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সাথে সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে অর্থ্যাৎ সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী সম্পর্কে আমাদের শিশু এবং তরুণ প্রজন্ম তারা যেমন উদ্বুদ্ধ হবে, সম্যক জ্ঞান পাবে, আবার যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বা দেশের জন্য বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনীতে অংশগ্রহণ করেছেন, দেশে-বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন, তাদের জন্যও একটা প্রেরণা আসবে এবং তাদের একটা আত্মতৃপ্তি হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রথম মেয়াদে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি প্রথমবার এসে ফ্রিগেট কিনি, একেবারে নতুন ফ্রিগেট। অবশ্যই এই ফ্রিগেট কেনার জন্য আমাকে আরও দুইটি মামলার আসামি হতে হয়। আমার এখানে কোনো দুঃখ নাই। যা করেছি জনগণের জন্য করেছি। যদিও এখানে তারা কিছু প্রমাণ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, আমার কথাটা হচ্ছে দেশের জন্য কাজ করা। এটাই তো আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তোলা এটাই লক্ষ্য ছিল। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে আমাদের জন্য আরও সহজ হয়েছে। আমরা অনেক কাজ করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের উপযুক্ত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা, সেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল। তাছাড়া আমার পরিবার আমার ভাই সবাই তো সামরিক বাহিনীতেই ছিল। কাজেই সেই সূত্রে আমি মনে এটাই মনে করি, এর সার্বিক উন্নতি আমাদের জন্য একান্তভাবে দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের এই সামরিক জাদুঘরের পাশে একটি জায়গা ছিল, সে জায়গায় একটা শিশুপার্ক করা হয়। এটার পেছনে আবার একটা ইতিহাস আছে। কোনো একজন, আমি নাম বলতে চাই না, নাম শুনলে হয়ত লজ্জা পাবে, তিনি হঠাৎ দাবি করে বসলেন তিনি সেখানে মাল্টিস্টোর বিল্ডিং করবে। তখন মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদিন। আমি আবেদিনকে বললাম, এই জায়গাটা কিছুতেই ওখানে মাল্টিস্টোর বিল্ডিং করা যাবে না। কারণ ওটা করতে গেলে আমাদের এই সামরিক জাদুঘর এবং আমাদের প্লানেটোরিয়ামটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে, ওখানে আমি শিশু পার্ক করে দেবো। যাই হোক ওখানে এখন দৃষ্টিনন্দন শিশু পার্ক হয়ে গেছে, এখন আর কেউ নিতেও পারবে না। দালান-কোঠা বানাতেও পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা কাজ করতে গেলে সবসময় একটা বাধা আসে। কিন্তু সেগুলো আমরা অতিক্রম করেছি। আজকে এটা করতে সফল হয়েছি। আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষের বিনোদনের জায়গা খুবই সীমিত। সেজন্য আমাদের চেষ্টা থাকে, তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা। আর বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষণীয় ব্যাপার। প্ল্যানেটোরিয়ামে অনেক ছাত্রছাত্রীরা আসে, তারা সেটা দেখে, অনেক কিছু জানতে পারে। আবার সেই সঙ্গে আমাদের সামরিক জাদুঘরও দেখতে আসতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটারের পশ্চিম পাশে ১০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে। যেখানে স্বাধীনতার আগে ও পরে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য নির্ধারিত গ্যালারিসহ ছয়টি পৃথক অংশ রয়েছে। প্রতিটি বাহিনীর গ্যালারিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।

এখানে আর্ট গ্যালারিসহ মাল্টিপারপাস এক্সিবিশন গ্যালারি, ব্রিফিং রুম, স্যুভেনির শপ, ফাস্ট এইড কর্নার, মুক্তমঞ্চ, থ্রিডি সিনেমা হল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, লাইব্রেরী, আর্কাইভ, ভাস্কর্য, মুর‌্যাল, ক্যাফেটারিয়া, আলোকজ্জ্বল ঝর্ণা ও বিস্তীর্ন উন্মুক্ত প্রান্তর সবকিছু মিলে একটি চমৎকার দৃষ্টি নন্দন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 

বাংলাদেশী সামরিক বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর ১৯৮৭ সালে মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে ঢাকার বিজয় স্মরণি রোডের পাশে বঙ্গবন্ধু প্ল্যানেটোরিয়ামের পশ্চিম পাশে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়।

জাদুঘরটি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর গৌরবময় অতীত, চ্যালেঞ্জ, অর্জন এবং মূল অগ্রগতি সম্পর্কে দেশের জনগণকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে প্রামাণিক তথ্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রদর্শিত তথ্য গবেষণা উদ্দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত