'সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে' জেল হত্যার রায় কার্যকরে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশ: ৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৫৮ | আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০১
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার বিচারের রায় কার্যকর করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এ কথা জানান।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আজ ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। বাংলাদেশে দুটি ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যার মধ্যে একটি ১৫ আগস্ট, অন্যটি ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনাটি। এই ঘটনাগুলো কারা ঘটিয়েছে তা সবাই জানে। অনেক হত্যাকারীর বিচার হয়েছে, এদেরও হবে। জেলহত্যার রায় কার্যকরে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিচ্ছি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
ইতিহাসের জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মো. মতিউর রহমান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। আর সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দিয়ে দেয়। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন হলেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়৷ এরা হলেন কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।
গত বছর পলাতক আসামি আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া পলাতক অবস্থায় খুনিদের একজন আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন বলে জানা যায়।
জেলহত্যা মামলার ১০ আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন, আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসার।
জেলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রায় কার্যকর করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি জেলখানা পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে নিরাপদ স্থান। কিন্তু কিভাবে আইন ভঙ্গ করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে সবাই জানে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে এবং রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। আর যারা পলাতক আসামি রয়েছেন তাদেরকে আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমরা যখন আসামিদের নিজেদের আওতায় পাবো তখনি ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, জেলহত্যা দিবসে আমরা প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। এছাড়া জাতীয় চার নেতাকেও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ, সিমিন হোসেন রিমি, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে রেজাউল করিম, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত