সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক

  কাজী আরিফ 

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২২, ১০:৩১ |  আপডেট  : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৪৮

‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।

বাংলার মধ্যযুগের এক কবি বড়ু চণ্ডীদাস উচ্চারণ করেছিলেন মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মানবিক বাণী।
সমগ্র বিশ্ব যখন হিংসায় উন্মত্ত, রক্ত ঝরছে যখন পৃথিবীর নরম শরীর থেকে, তখন এই বাংলার এক কবি বিশ্বকে শুনিয়ে ছিলেন মানবতার অমর এই কবিতা।

প্রকৃতির সেরা জীব মানুষ। মানুষের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধি, বিচার বোধ, বিবেক, মানবিকতা। এক দেশে, এক জায়গায়, একই সাথে বাস করার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা একান্তই কাম্য। সমাজের দেহকে সুস্থ সবল রেখে সমাজের ভবিষ্যতকে বিকাশের পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সবার আগে ধ্বংস করতে হবে সাম্প্রদায়িকতার দুষ্ট জীবাণুকে। যার জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ।

ধর্ম মানুষকে সম্প্রীতি ও পরমত সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। ধর্মের সঠিক জ্ঞান অর্জন ও অনুশীলন মানুষের মনে সুন্দর অনুভূতির জন্ম দেয়। বিপরীতে ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব মানুষকে ভুল বার্তা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ধর্মের ভুল ব্যখ্যা বা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়। যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। 


সবাই এদেশের নাগরিক। নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার সবার আছে। অন্য ধর্মের উপাসনালয় ভাংচুর, হত্যা, নির্যাতন কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশয় ও মদদে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দিন দিন বলীয়ান হচ্ছে, যা চূড়ান্ত বিচারে কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। তাছাড়া অপরাজনীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের কাজকে উৎসাহিত করছে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো আমাদের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। কেউ ধর্মের অবমাননা করে থাকলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুসারে তার বিচার হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া সমীচীন নয়। তাছাড়া একক মানুষের ধর্ম অবমাননার দায় ঐ সম্প্রদায়ের সকলের উপর বর্তায় না। 

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উপড়ে ফেলতে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে সবার আগে। দেশেকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে। কোন প্রকার গুজব বা উস্কানিতে পা দিয়ে কারো হীন স্বার্থ বা উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে সবার আগে মানুষ। অশুভ শক্তির বিনাশ হোক, শুভ শক্তির উদয় হোক- এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত