শ্রম আইন নিরবে কাঁদে, কাউনিয়ায় নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫২ | আপডেট : ১ মে ২০২৫, ০১:২০

আজ ১ মে দিবস, শ্রমিকদের দাবী আদায়ের বিজয়ের দিন। মহান মে দিবস যে উদ্দেশ্যে হয়েছিল আমাদের দেশে সে উদ্দেশ্য নানা ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রংপুরের কাউনিয়ায় শ্রমিকরা বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার। কাউনিয়ায় ১টি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে পুরুষ শ্রমিকের পাশা পাশি নারী শ্রমিকেরা কাজ করছে। বর্তমান বাস্তবতায় পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকের কদর অনেক বেশী হলেও বৈষম্যে থেকে তারা রেহাই পাচ্ছে না। নারী শ্রমিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়ে অতি কষ্ঠে জীবন যাপন করছে। ধান লাগানো, ধান কাটা, ধান মাড়াই, মাটি কাটা, হোটেল, রাইচ মিল, চাতাল, বিড়ি ফ্যাক্টরী, ইট ভাটা, রাজ মিস্ত্রীর জোগালী, পাথর ভাঙ্গার কাজসহ সব রকম ভারী কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা করলেও তারা ন্যায্য মজুরী পায় না। এ উপজেলার অধিকাংশ নারী শ্রমিক স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা, কেউবা অধিক সন্তানের জননী, আবার কারও স্বামী পঙ্গু। অভাবের তাড়নায় তাদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। বিনিময়ে মালিকরা যা দেয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। যদি কেউ মজুরী নিয়ে প্রতিবাদ করে তবে তাদের কাজ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। পুরুষ শ্রমিক যেখানে একই কাজ করে পায় ৫০০-৬০০টাকা পায় সেখানে নারী শ্রমিকরা পায় ৩২০-৩৫০ টাকা। বৈষম্যের শিকার এরকম দুই নারী শ্রমিক আরিফা বেগম ও রুপালি বেওয়ার সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, জিনিস পত্রের যে দাম কাজ করে যে টাকা পাই তাতে কিছুই হয় না। যা পাই তাই দিয়ে কোন মতে বেঁেচ থাকি খেয়ে না খেয়ে। একটি বে-সরকারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জানাগেছে, এ উপজেলায় প্রায় ৭হাজার নারী শ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু নারী ৪০টি তামাক ভাঙ্গা চাতাল, ৯২টি মিল চাতাল, ১০টি ইট ভাটা, ২টি জুট মিল, এবং বিভিন্ন হাট বাজারের হোটেলসহ কৃষি খামারে কাজ করে। তারা শ্রম আইনের আওতায় নেই বরং বৈষম্যের শিকার। কাউনিয়ায় শ্রম আইন নিরবে কাঁদে। দেশে শ্রম আইন আছে কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ নেই। নারী জাগরনের অগ্রদূত মহিয়শি নারী বেগম শাখাওয়াত হোসেনের জন্ম রংপুরের পায়রা বন্দ গ্রামে। তিনি নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্ম নিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। সেই মহিয়শি নারীর জন্মস্থানের জায়গায় নারী শ্রমিকরা আজও মজুরী বৈষম্যের শিকার। আধুনিক সভ্যতার বিকাশে নারীর অবদানের জয়গান শোনা গেলেও কাউনিয়ায় নারী শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মর্যদা ধুলোয় লুটিয়ে মিশে যেতে বসেছে। যত বৈষম্যে সব যেন শুধু নারীরই জন্য। প্রতিবছর শ্রমিক দিবস, নারী দিসব পালিত হয়, সকল কাজে নারী পুরুষ সম-অধিকারের কথা বলা হয়। কিন্তু ন্যায্য মজুরীর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এ বৈষম্য দুর হলে দেশের অর্থনীতি একধাপ এগিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত