শিমুলিয়া ঘাটে রাতভর জনস্রোত, বিজিবি কঠোর অবস্থানে
প্রকাশ: ১০ মে ২০২১, ১৫:০৩ | আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯
বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে তাই দেশজুড়ে দেওয়া হয়েছে কঠোর লকডাউন। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ি ফিরতে গত কয়েকদিনে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা গেছে লাখ লাখ মানুষের ঢল। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেপরোয়া ভাবে শিমুলিয়া ঘাট হয়ে ফেরিতে ও ট্রলারে চড়ে পদ্মা পার হচ্ছে। আর গাদাগাদি করে বাড়ি ফেরার এ দৃশ্য সকলকে বিস্মিত করলেও দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ঈদ ঘরমুখো মানুষের মধ্যে করোনার কোনো বালাই নেই, জনস্রোতের ন্যায় চলছে বাড়ী ফেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার রাতেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে জনস্রোত যেন দিনের বেলায় ঈদে ঘুরমুখো মানুষের ঢলকেও হার মানিয়েছে। এসব মানুষ পারাপার করতে ১৫টি ফেরি সচল করেও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছিল না, বিআইডব্লিউটিসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত ৩ দিনের চেয়ে আজ সোমবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো যাত্রী চাপ নেই। সকাল ৯টার পর থেকে খন্ড খন্ড ভাবে কিছু যাত্রীকে ট্রাকে, কাভ্যাটভ্যানসহ ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে ঘাটে আসতে দেখা গেছে। তবে সোমবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করায় ও চেকপোস্ট কঠোর পদক্ষেপের কারনে অনেক যাত্রী ঘাটে যেতে না পারে ফিরে গেছে বিকল্প পথের সন্ধানে। ঘাট সূত্র জানায়, সকাল ১০টার পর থেকে ভায়া মাধ্যম হয়ে ঘাটের দিকে আসতে থাকায় যাত্রী চাপ বাড়তে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে শিমুলিয়া ঘাট হয়ে ঘরমুখো মানুষের পদ্মা পারাপার ঠেকাতে রোববার সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাটে মোতায়েন করা হয় দুই পাল্টুন বিজিবি সদস্য সোমবার সকাল থেকে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।
ফেরিঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. জিয়া হাসান জানান, রাত সাড়ে ১২টায় ফেরি কুঞ্জলতা শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। মানুষের অনেক চাপ থাকায় ওই ফেরিতে শুধু ৪টি ছোট গাড়ী আনলোড করা সম্ভব হয়েছে, আর সবই ঈদ ঘরমুেেখা মানুষ। গাদাগাদি অবস্থা। এর আগের ফেরি ফরিদপুর বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সেটিতেও মানুষ আর মানুষ। তিনি বলেন, রোববার দিনগত রাত ২টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অক্ষোয ছিল ছোট আকারের প্রায় দুই থেকে আড়াই’শ যানবাহন। একই সময়ে অপেক্ষায় ছিল ৪ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। দিনভর ফেরি প্রায় বন্ধ থাকার পর শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়। প্রথমেই পারাপার করা হয় অ্যাম্বুলেন্স। এরপর জরুরি সেবার যান, পন্যবাহি ট্রাক ও দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ঈদ ঘরমুখো যাত্রীদের।
প্রসঙ্গত, রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত মাত্র ২টি ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে ও চেক পোস্টে আটকে ছিল অন্তত ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ী। পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য আকুতি করছিলেন তারা। তবে দিনের বেলায় কোনোভাবেই আর ফেরি চলাচল করবে না বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি। জরুরি যানবাহনও বিকল্প পথে চলাচলের জন্য অনুরোধ করেছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। তবে সেই অনুরোধ উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়েও শিমুলিয়া ঘাট হয়ে পদ্মা পারাপার হতে জড়ো হয়েছেন।
অপরদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকা, ঘাটে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের বাঁধার ফলে ভিন্ন কৌশলে পদ্মা পাড়ি দিয়ে নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার ঈদ ঘরমুখো মানুষ। আর এ সুযোগে কতিপয় অসাধু চক্র লৌহজং ও শ্রীনগরের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে দ্বিগুন ভাড়া নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পদ্মা পারাপার করে দিচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত