শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ এশিয়া গড়তে এক হওয়ার আহ্বান শেখ হাসিনার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২১, ২০:৩৬ |  আপডেট  : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এ বিশ্বাস আমাদের আছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দশ দিনের আয়োজনের অষ্টম দিনের অনুষ্ঠানে আজ বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি।

কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা।

ভূটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধির ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন চতুর্থ বিশ্ব নেতা যিনি এই উদযাপনে যোগদান করেছেন।

ভুটান এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার কাছে একটি স্মারক ডাক টিকেট হস্তান্তর করেন। এরআগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে ১৭ মার্চ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহ এবং তাঁর সহধর্মিনী ফাজনা আহমেদ এবং তৃতীয় দিনে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজা পাকসে এবং ৬ষ্ঠ দিন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি অনুষ্ঠানে যোগ দান করেন।

ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসার কথা রয়েছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে দশ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। অষ্ঠম দিন বুধবারের আয়োজনের থিম ছিল-‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন এদিন অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রওনক জাহান অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আজকের মূল প্রতিপাদ্যের ওপর সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর একটি ভিডিও প্রেজেনটেশনও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি বন্ধু-রাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরণের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বহু প্রাচীন। ১০ম শতাব্দীতে বাংলাদেশ ভূখ-ে জন্মগ্রহণকারী বৌদ্ধ ধর্মগুরু মহাসিদ্ধ তিলোপা তিব্বত-ভুটানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের জনগণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের শুধু সমর্থনই দেননি, সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভুটানের তরুণেরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটানই প্রথম দেশ যে নাকি স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। তখন পাকিস্তানী হানাদারদের হাতে বন্দী থাকার কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। আর আমার মা, আমি, শেখ রেহানা, ছোট ভাই শেখ রাসেল, পাঁচ মাস বয়সী জয়সহ আমরা সবাই তখনো পাকিস্তানী হানাদারদের হাতে বন্দী ছিলাম। বন্দী দশায় যখন রেডিওতে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভুটানের স্বীকৃতি প্রদানের কথা শুনতে পেলাম, সেটি আমাদের কাছে একটি অনন্য সময় ছিল। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য আমরা ২০১২ সালে ভুটানের মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করেছি।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানী ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। আজকের সম্মানিত অতিথি প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হতে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ভুটানের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত। তাই ডা. লোটে শেরিং শুধু ভুটানের না, আমাদের দেশেরও একজন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লড়াই করেননি। তিনি বিশ্বের সকল নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান এবং আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, করোর সঙ্গে বৈরীতা নয়’-বঙ্গবন্ধুর এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।

সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিব চিরন্তন’-এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ১৭ মার্চ থেকে ২৬-এ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০-দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আজ বুধবার ছিল ৮ম দিন। এই অনুষ্ঠানমালাকে ঘিরে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই মালদ্বীপ এবং নেপালের রাষ্ট্রপতিদ্বয় এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। এই অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং আমাদের মাঝে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছে এবং আমরা নিজেরা সম্মানিত বোধ করছি। আমি আমার নিজের, ছোটবোন শেখ রেহানা’র এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাঁকে এবং ভুটানের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এছাড়া, ভারতের কংগ্রেস নেতী সোনিয়া গান্ধী, পোপ ফ্রান্সেস, ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, চীনের রাষ্ট্রপতিসহ যারা ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদেরকেও আমরা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই করোনা মহামারী থেকে গোটা বিশ্বের মানুষ মুক্তি পাক, সবাই সুস্থ্য ও ভাল থাকুন-এই কামনাই করি।

অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে মুজিব চিরন্তন শ্রদ্ধা-স্মারক উপহার দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, এমপি। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডা. লোটে শেরিং সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপভোগ করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত