লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙ্গন, র্নিঘুম রাত কাটাচ্ছে শতশত পরিবার

  লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা 

প্রকাশ: ২২ মে ২০২২, ২০:১২ |  আপডেট  : ১৭ মে ২০২৪, ২১:৪৮

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তীব্র স্রোত আর পদ্মায় অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজিং ও নদীতে শত শত বাল্কহেড চলাচলে ঢেউয়ের তোরে নতুন করে শুরু হয়ে লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙ্গনের খেলা।আবারও সর্বনাশা পদ্মায় ছোঁবল দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মানচিত্রে। 

প্রতিবছরই আঘাত হানছে আড়াই লাখ জনসংখ্যার বসবাসরত লৌহজং উপজেলার মানচিত্রে। উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের  ৩নং ওয়ার্ডে সপ্তাহখানেক যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে।  রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়  বড় নওপাড়া গ্রামের পারুল বেগম দুপুরে রান্না ঘরে রান্না  বসিয়েছেন  তার রান্না ঘরটি একাংশ পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শনিবার রাতে আর কিছু অংশ রয়েছে যে কোন সময় তাও পদ্মা গভে চলে যেতে পারে  এমন আতংক নিয়ে তিনি রান্না করছেন। 

গত শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে হোসেন মোল্লার ৪'শ বছরের পুরনো ভিটেবাড়ি ভেঙে যায়। পরে তরিগরি করে ঘরটি ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে রাখে। এমনি করে একই এলাকার নধরি পাড়ে অবস্থিত রাব্বি শেখ, গাজী রাজ বংশী, মো. রাসেল মাদবর, ইসমাইল শেখ, ্শু পাল রাজবংশী ও হাজী মো. হোসেন মোল্লার বাড়িটি সদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।  মিঠু মোল্লার একটি ঘরের আংশিক পদ্মার গর্ভে। 

এ ছাড়া আবু বকর সিদ্দিক মোল্লার বাড়ি, মো. হুমায়ুন মোল্লার বাড়ি, মো. শাহজাহান মোল্লার বাড়ি, মো. সারোয়ার মোল্লার বাড়ি, এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান  মরহুম আব্দুর রশিদ মোল্লার বাড়ি  ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে।  সে সাথে বড় নওপাড়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের ভিটেবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কখন পদ্মায় গিলে খায় সে আতঙ্কে নিঘুম  দিন কাটাচ্ছে নদীর পাড়ের মানুষ।

আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, প্রায় ২৫ বছর যাবত আমি এই বাসায় থাকি। আমার বাসার এক তলা দালানটি অর্ধেক নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বাকি টুকু কখন যে নদীতে বিলীন হয়ে যায় সেই চিন্তায় আছি। সামনের বাড়িঘর সব পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। 

আমরা অহন কোথায় যামু। ফরিদ মাঝি বলেন, গত ৩ দশক যাবত দেখছি প্রতিবছর গ্রামের পর গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফাতেমা বেগম জানান, ১৭ বছর যাবত বিয়ে হয়েছে। আশপাশে নদী দেখিনি। এখন নদীর প্রতিটি ঢেউ কানে বাজে। আমরা আতঙ্কে দিনরাত কাটাচ্ছি। রাতে ঘুমাতেও পারি না। মনে হয় এই বুঝি পদ্মায় খেয়ে ফেলবে। দ্রুত এ ভাঙ্গনের স্থায়ী সমাধান চাই।

এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল  ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করান। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা ভাঙন এলাকায় আসেন। এবং ভাঙ্গণরোধে জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল জানান, গত বুধবার লৌহজং-টঙ্গাবাড়ি উপজেলায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থানীয় বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। সে প্রেক্ষিতে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ফাউন্ডেশন করা হচ্ছে। তারপর পাথর দিয়ে বাঁধ দেওয়া হবে। 

আর এখন চলছে বর্ষা মৌসুম সে ক্ষেত্রে পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা দিনদিন বাড়ছে। আর লৌহজংয়ে নদীর পাড়গুলোতে ঢেউয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ডেকেছি। এবং দ্রুত ভাঙ্গনরোধে জিও ফেলার জন্য বলেছি। তারা আগামী দুই একদিনের মধ্যে এ সকল এলাকায় ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ ফেলবে। আশা করছি স্থায়ী বাঁধ হয়ে গেলে এ সকল সমস্যায় আর পড়বে না লৌহজংবাসী।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত