লৌহজংয়ে ইউপি মেম্বারের ১২ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগ 

  স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২২, ১৯:০৯ |  আপডেট  : ১৫ মে ২০২৪, ১৯:০০

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার শংকর চন্দ্র ঘোষের নামে ১২ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একাউন্ট হোল্ডার সাধণ সরকার গতকাল সোমবার লৌহজং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে  পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। 

চেক বইতে একাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন এক ইউপি মেম্বার। ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া বাজার সোনালী ব্যাংক শাখায়। জানা যায়, হলদিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সাধণ সরকারের নামে সোনালী ব্যাংক হলদিয়া বাজার শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। ওই হিসাব থেকে গত ২৪ মার্চ ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করে স্থানীয় হলদিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার শংকর চন্দ্র ঘোষ। ঘটনার কয়েক দিনপর সাধণ সরকার তার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পারে।  

এ সময়ে সাধণ সরকার শংকর মেম্বারের কাছ থেকে আপষে টাকা ফেরত চাইলে তাতে শংকর ঘোষ থেকে কোন সদুত্তর না পাওয়ায় গত ১ এপ্রিল লৌহজং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন সাধণ সরকার। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার পুলিশ তদন্তে এসে দেখতে পায়, শংকর মেম্বার তার নিজ জিম্মায় চেকের পেছনে স্বাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার এবং এনআইডির কপি দিয়ে ব্যাংক থেকে সাধন সরকারের স্বাক্ষর জাল করে ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। 

এ ব্যাপারে সাধণ সরকার গ্রামনগর বার্তাকে জানায়, আমার চেক বই ও ব্যাংকের কাগজ পত্র সাধারণত দোকানেই থাকে। কিছুদিন আগে আমার কাছে একটা ফোন আসে, বাজারের বিভিন্ন দোকানে চুরি হচ্ছে। এরপর তোমার দোকান টার্গেট। তাই দোকানে জরুরী কিছু থাকলে বাড়িতে নিয়ে রাখো।' এ কথায় আমি আমার ব্যাংক একাউন্টের চেক বই ও একটি ফিক্সড ডিপজিটের সব কাগজ পত্র বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়ি থেকে কিভাবে আমার চেক শংকর মেম্বারের কাছে গেলো তা বুঝতে পারছিনা। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় প্রাপক হিসেবে আমার স্ত্রী'র নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী ব্যাংকে টাকা তুলতে যায়নি বলে জানিয়েছে। তাছাড়া চেকে আমি বা আমার স্ত্রী কোন স্বাক্ষরও করিনি। আমাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। 

কয়েকদিন পূর্বে আমার স্ত্রী'র ন্যাশনাল আইডি কার্ডে নাম সংশোধনের জন্য আমি স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। ধারণা করছি সেখান থেকে শংকর মেম্বার আমার স্বাক্ষর কপি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। তাছাড়া ১২ লাখ টাকা আমার একাউন্ট থেকে তুলে নেবার সময় ব্যাংক থেকেও আমাকে কোন ফোন দেয়া হয়নি। 

শংকর মেম্বার বলছে, আমার স্ত্রী ঝুমুর নাকি চেক নিয়ে এসেছিল। যদি তাই হয়, তবে মাত্র ১/২ মিনিটের পথ ব্যাংক থেকে আমার দোকান। আমরা তিন ভাই দোকানে কাজ করি। আমাদের কাছে সে নিজে যেতে পারতো। বা ফোন অথবা কাউকে পাঠিয়ে খবর দিতে পারতো। এ থেকে ধারণা করছি আমার টাকা এ মেম্বারেই জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়েছে। তাছড়া আমার ফিক্সড ডিপজিটের টাকাও তুলে নিতে ব্যাংকে গিয়েছিল এই মেম্বার।

অভিযোগ অস্বীকার করে শংকর মেম্বার জানান, তখন আমি ব্যাংকে ছিলাম। সে সময়ে সাধনের স্ত্রী ঝুমুর সরকার ব্যাংকে এসে আমাকে টাকাটা তুলে দিতে বলে। আমি টাকাটা তুলে সাধনের স্ত্রীকে দিয়ে দেই। আমি ভুল করেছি। এখন সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয়ভাবে বৈঠক হচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্যাংক ম্যনেজারের সাথে ফোনে কথা বলে জানা গেছে যথারীতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ  গ্রাহকের দেয়া মোবাইল নম্বর ০১৯২২৯৫২৯৬৩ ২৪সে মার্চ দুপুর ১১টা ৫ মিনিটে কথা হলে চেক ক্লিয়ারিং করার কথা বলা হয়। তবে কে রিসিভ করেছে তা কন্ঠ পরীক্ষা করা ব্যাংকের কাজ নয়  ব্যাংক সর্বত্র নিয়ম মেনে চেক অনার করে। 

যেহেতু একজন নির্বাচিত মেম্বার বেয়ারার চেক নিয়ে আসে ও তার স্বাক্ষর ও মোবাইল নম্বর ও এন আই ডি রেখে ফোনে ক্লিয়ারিং নিয়েই চেক অনার করা হয়।

 ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান বেয়ারার চেকের পেছনে ঝুমুর সরকারের স্বাক্ষর ছিলো। যেহেতু ঝুমুর সরকার আমাদের পরিচিত নয় সেইহেতু শংকর ঘোষ তার  স্বাক্ষর দিয়ে টাকা তুলে নেন।

 শংকর ঘোষ টাকা নিয়ে  গ্রাহকের স্ত্রী কে দিয়েছে কিনা এটা জানার কথা ব্যাংকের নয়। শাখা ব্যবস্হাপক ঐ দিন কনফারেন্সে ছিলেন, তিনি ব্যাংকে ছিলেন না।

 তারপর সাথে সাথে ডেবিট  ম্যসেজ পাঠিয়েছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে  পুলিশ তদন্ত চলছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্হা নেয়া হবে।

অপরদিকে হিসাবধারী ব্যক্তি সাধন সরকার  ফোন পাননি বলে জানান। এদিকে শংকর মেম্বারের বিরুদ্ধে সাধন সরকারের দোকান ্ঘড়ের জাল দলিলে সাক্ষীর অভিযোগ  পাওয়া গেছে। 

সাধনের স্ত্রী  তার স্বামীর দোকানঘর স্বামীর স্বাক্ষর জাল করে লিখে নেয় বলে জানা গেছে। উক্ত দলিলে সাক্ষী হিসাবে জনৈক জহির ও শংকর ঘোষের স্বাক্ষর  রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়।

বিষয়টি জনমনে নানা প্রশ্নের ও রহস্য দেখা দিয়েছে। জনগনের ধারণা  উল্লেখিত কথিত জাল স্বাক্ষরকারি / একাউন্ট হোল্ডার/ একাউন্ট হোল্ডারের স্ত্রীকে আইনগত ভাবে তদন্তের আওতায় আনা হোক। 

ব্যাংক কতৃপক্ষ বলেন চেক স্বাক্ষর বিষয়টি     স্পর্শকাতর। ব্যাংক কতৃপক্ষ  স্বাক্ষর যাচাই করেই টাকা প্রদান করে তবে এ ক্ষেত্রে ও তার ব্যত্যয়  হয়নি। টাকা গ্রহীতা ও টাকা নেবার বিষয়টি  অস্বীকৃতি  জানায়নি।  একাউন্টস  হোল্ডার চেকের পাতায় স্বাক্ষর করেছে কীনা বা তার স্বাক্ষর  জাল হয়েছে কীনা তা এক্সপার্ট  বলতে পারবে।

সাধণ সরকারের স্ত্রী’র সাথে দীর্ঘদিন যাবত সাধণের সম্পর্ক ভাল না সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত শংকর ঘোষ কেন সাধণ বা সাধণের অপরাপর ভাইদের সাথে কোন যোগাযোগ না করে বাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা উত্তোলন করলেন তাও রহস্যজনক।

এখন প্রযুক্তি নির্ভর তাই স্বাক্ষর জাল না সঠিক, ম্যসেজ বা ফোন করা হলে ভয়েস রেকর্ড আছে, সে ক্ষেত্রে এসব প্রমাণ এখন কর্তৃপক্ষ আন্তিরক ভাবেই ইচ্ছা করলে করতে পারেন বলে এলাকাবাসী মনে করছে।

 জনগনের ধারণা সাধনের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে  বাড়ী হতে কী ভাবে চেক গেলো বিষয়টা   পরিষ্কার হবে।

চেক হারিয়েছে এই মর্মে জিডি করা হয়েছে তবে জিডির কোন কপি ব্যাংকে দেয়া হয়নি বলে ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে ও জনমনে   প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  
সাধন বাবুকে ডাকাতির ভয় দেখানো হয়েছে ফোনে। সেই ফোন রেকর্ড ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বের করতে পারে।

লৌহজং থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, এ ঘটনায় সাধন সরকার থানায় অভিযোগ করেছে। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত