লৌহজংয়ে অসময়ে পদ্মার ভাঙ্গন নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে ৫’শ পরিবার
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০৫ | আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৮
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে ৪টি ইউনিয়ন জুড়ে অসময়ে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন। নদী পাড়ের ইউনিয়ন গুলোর বেশির ভাগ ওয়ার্ড পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া ও সারা বছর ধরে প্রতিনিয়তই ভাঙ্গছে এই রাক্ষুসী পদ্মা। কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রাম বিলীনের পর এবার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে পদ্মা নদী ঘেষা বেজগাঁও ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বড় বেজগাঁও গ্রামটি। এই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর ও বাদশা মিয়া দুই ভাইয়ের বাড়িটি অর্ধেক অংশ এখন নদী গর্ভে চলেগেছে গেলো দু'দিন হয়।
বাকি অর্ধেক বাড়ির রাক্ষুসী পদ্মা গিলতে বসেছে এমনটি অক্ষেপ করে বলেছেন জাহাঙ্গীর মিয়া। তারা ভাঙ্গন ঠেকাতে নিজস্ব উদ্যোগে বালি ভর্তি বস্তা ও বাশের বেড়া দিয়ে কোন রকম আত্ম রক্ষার চেষ্ঠা করছে বাব দাদার বসত ভিটার শেষ চিহ্ন টুকু তবে শেষ রক্ষা হবে কিনা তা তারা জানেনা। এমনি নদী পাড়ের পাচঁ শতাধিক পরিবার নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে ভাঙ্গন আতংকে। বড় বেজগাঁও গ্রামের আয়ুব আলী সরদার (৮৫) ক্ষোব প্রকাশ করে বলেন এখন আমাদের ঠিকানা হবে সারা দেশের পদ্মা নদীতে কারন জানতে চাইলে সে জানায় তার বসত বাড়ি ছিল দিঘলী গ্রামে সেখান থেকে তিন বার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এখন সে শেষ বারের মত বাড়ি করেছেন বড় বেজগাঁও গ্রামে আজ অসময়ে পদ্মা ভাঙ্গনের মুখে এই শেষ ভরসা টুকু হারাতে বসেছে।
নদী শাসন ও বাধেঁর কথা বল্লে তিনি জানান, তা শুধু ফাইল বন্দি আছে কাগজে কলমে বাস্তবে আমাদের ঠিকান যখন হবে পদ্মায় তখন নদী শাসন দিয়ে আমরা কি করবো। বর্তমানে বেজগাঁও ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বড় বেজগাঁও থেকে লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বাঘের বাড়ি পর্যন্ত পদ্মা পাড়ে ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এই তিন কিলোমিটার ভাঙ্গনের কারনে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত বসতি বাড়ি, ফসলি জমি, খেলার মাঠ, মসজিদ, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ নানা স্থাপনা ও বাগান বাড়ি।
ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও বেগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তাতে কাজে আসছে না বলে জানান স্থানীয়রা। অনেক যায়গায় জিও বেগ ফেলার পরেও নতুন করে সে সব এলাকা ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। বেজগায়ে স্যুটিং স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র মৃধা বাড়ি নামে পরিচিত বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ফারুক ইকবাল মৃধার নয়ন জুড়ানো বাড়িটি এখন পদ্মা ভাঙ্গনের মুখে। এমনি দৃষ্ঠি নন্দন বেশ কয়েকটি বাড়ি এখন পদ্মার কড়াল গ্রাসের মুখে রয়েছে। ইতিমধ্যেই পদ্মা রির্সোটটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রচন্ড বাতাস আর ঢেউয়ের তোড়ে দিন দিন পদ্মার ভাঙ্গন বেড়েই চলেছে।
লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে গাওঁদিয়া ইউনিয়ন, বেজগাঁও ইউনিয়ন, কনকসার, লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন, দক্ষিন হলদিয়া ও কুমারভোগ ইউনিয়নের তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত গ্রাম গুলোতে এই ভাঙ্গনের খেলা চলছে। তবে এ ভাঙ্গন রোধে জরুরী ব্যবস্থা না করা হলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙ্গনের ভয়াবহতা আরোও তীব্র আকার ধারন করবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসি।
অসময়ে পদ্মার ভাঙ্গন বিষয়ে লৌহজং উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রতিবছর পদ্মা কমবেশি ভাঙ্গছে আবার আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। এই অপরিকল্পিত ভাঙ্গন রোধ সময়ের ব্যাপার। এখানে বৃত্তর পদ্মা সেতু হচ্ছে আর সেটি রক্ষা করতে আগে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে সব এলাকায় ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙ্গনের সৃষ্ঠি হয়েছে সে বিষয়ে উর্দ্বোতন কতৃপক্ষ সজাগ দৃষ্ঠি রয়েছে খুব শীগ্রই ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত