রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ১৯:৪৯ | আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:০০
সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে গণভবনে সফররত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
জাতিগত নিধনের শিকার জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে এক মিলিয়নের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনায় ছিলাম। যদিও সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল না।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু মিয়ানমারের এই পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাসানচরকে প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভাসানচর দ্বীপে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নেওয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে নেওয়া হয়েছে।
এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির।
জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি (ইউএনজিএ) ভলকান বজকির বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নত দেশ হয়ে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তিনি আজ সকালে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে একথা বলেন।
‘বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্রাজুয়েশনের একটি দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের মানুষ খুব সাহসী এবং তারা এটা এগিয়ে নেবে,’ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ভলকান বজকিরকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের বিফ্রিং একথা বলেন।
ইহসানুল করিম বলেন, উভয়ে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা এবং কোভিড-১৯সহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। ভলকান বজকির আজ সকালে এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা এসে পৌঁছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বেরও ভূয়শী প্রশংসা করেন।তিনি বাংলাদেশের লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ একজন নারী প্রধানমন্ত্রী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত কেননা তিনিই প্রথম সংসদে ১০ শতাংশ নারী কোটা বরাদ্দ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমাজের সর্বক্ষেত্র বিশেষ করে রাজনীতি এবং প্রশাসনে নারীর ক্ষতায়নে কেবল তাঁর পদাঙ্কই অনুসরণ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং সংসদ উপনেতা বর্তমানে একজন মহিলা।
ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, সরকার প্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে তারা এ বছরের সাধারণ অধিবেশন আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করছেন।তিনি বলেন, ‘আমরা এবছর ইউএনজিএতে ওয়ান প্লাস ওয়ান পারসন প্রতিনিধিদল প্রতিটি দেশ থেকে অংশ নেওয়ার অনুমতি প্রদান করার কথা ভাবছি।’
ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার সাহসি ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত প্রায় ১০ লাখের ও অধিক রোহিঙ্গার পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কিন্তু এ ব্যাপারে বলার মত কোন অগ্রগতি সাধিত হয়নি। তিনি বলেন, আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি কিন্তু সাম্প্রতিক যা অগ্রগতি তাতে পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আগত অতিথিকে জানমাল রক্ষায় এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাঁর সরকার গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ চলাকালীন সোশাল সেফটি নেট কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তিনি এবং তাঁর বোন যে বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন তাও তুলে ধরেন।ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট আগামী বুধবার পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ত্যাগের আগে আগামীকাল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।
অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত