রীতি নীতি
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২১, ০৯:৫৮ | আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:২২
কামরুল হাসান ফেরদৌস
-------------------------
আমাদের লোকালয়ে কী আজব রীতি
কেউ তো চাহেনা আর অকপট প্রীতি।
খোলামন ভালোবাসা মিছে আশা হয়
সবকিছু ঘিরে আছে শুধু অভিনয়।
কাদাজলে শিলা ভেসে করে কিলবিল
মাছ চেয়ে ফিরে যায় ভুখা গাংচিল।
বুকভরা প্রেম নিয়ে হাতে নিয়ে ফুল
প্রীতি নিয়ে এলে কেউ তাকে বুঝি ভুল।
মালা নিয়ে এলে সখা জ্বালা দেই তাকে
কাঁটা দেই ঝাঁটা দেই ফেলে দেই পাঁকে।
ফুলবনে গুঞ্জনে কাঁদিছে ভ্রমর
অলি নয় বিষ পোকা হয়েছে অমর।
সরলতা নিয়ে এলে তাকে ভাবি ছল
তরল গরল ভেবে হই চঞ্চল।
সোহাগ পরশ পেতে মেলে দিলে হাত
কুটিল চিন্তায় করি অভিসম্পাত।
অবিরত বিষপানে জিভ হলো তেঁতো
মধুর ভান্ড দূরে রাখি হয়ে ভীতু।
বুকে নিলে কেউ মোরে সোহাগ পরশে
তারে ফেলে চলে যাই দূরে যে নিমিষে।
ভাবি বুঝি এলো কাছে সাথে ছোরা নিয়ে
ঝোপ বুঝে দেবে কোপ থাকি সেই ভয়ে।
ভয়েতে ত্রস্ত থাকি আপন আলয়ে
বাঁচার সাধ্য নেই এ মন্দ বলয়ে।
ততো ভালো কাজ নেই যতো কথা মেলা
ভালবাসা ভালো ভাষা ভাষণের বেলা।
বিনা লাভে বিনা লোভে কথা কদাচিৎ
কথকের কূটচালে স্রোতা হয় চিৎ।
ইনিয়ে বিনিয়ে কথা সরলের কানে
ভুলাতে অবলা মন গরলেরা জানে।
ভাল কথা ভাল নয় ভাল লোকে বলে
ইদানিং ভালো কথা পুঁথির কপালে।
বাগানে ফলে না ফল কথা ফলে থাকে
ছোট মুখে বড়ো কথা শুনি ইহলোকে।
কথার বাহার শুধু চর্চা কথার
কাজ নয় চারি পাশে কথা সমাহার।
কপটের দাপটেতে ধরাধাম কাঁপে
খোলা মনে পড়ে দাগ যেনো কোন পাপে।
সমাজের স্তরে স্তরে মোনাফেকি হেরি
অবলীলাক্রমে কিছু নিজেও তা করি।
যাকিছু করিনা কেন মনে থাকে কাঁটা
আমিও সমাজ মম কপালেতে ঝাঁটা ।
যদি কভু ভালো হই ভালবাসি তারে
সে বুঝে উল্টো মানে অন্য ইহারে।
প্রিয়ার কর্ণে ঢালি মধু সংগীত
কিন্তু তা হয়ে যায় হিতে বিপরীত।
যদি ডাকি কাছে তারে সে বুঝে ইহারে
বলেছি যে চলে যেতে অন্য প্রকারে।
মন্দকে ভালো বুঝি মন্দ ভালোকে
আঁধারে নিবাস গড়ি ত্যাজিয়া আলোকে ।
হলাহল করে পান তৃপ্তিতে হাসি
ছলনায় ভুলে যাই মায়া ভালবাসি ।
সোজাকে কঠিন ভাবি কঠিনে সহজ
আঁকা বাঁকা ভাবনায় খাটাই মগজ।
ভ্রমরের গুঞ্জনে কানে দেই তালা
পুষ্পসৌরভ নাকি হৃদে আনে জ্বাল।
কানে তুলো গুঁজে রাখি না শুনিতে সুর
চোখেতে রূমাল বাঁধি না দেখিতে ভোর।
সবুজ সুন্দরে হানি নিন্দার তীর
বিবেক বস্তুতে আজ ধরে গেছে চীর।
আধুনিক এই কালে সুহৃদ সুজন
লাগেনা হয়তো ভালো পাখির কূজন।
উড়ে গেলে বলাকারা বাগাই ধনুক
গান গেয়ে গেলে কেউ লাগাই চাবুক।
সংগীতে বড় ভয় সন্দেহ দানা
ভালটুকু ত্যাজিবার কত যে বাহানা ।
সকলে নিজকে ভাবে কেউকেটা জন
স্বজনে দূরেতে ঠেলে দুরকে আপন।
মুর্খ নিজকে ভাবে জ্ঞানের জাহাজ
মন চায় করে তাই অকাজ কুকাজ।
হামবড়া ভাব নিয়ে থাকে চূণোপুটি
অপরের দোষ দেখে হেসে লুটোপুটি ।
আপন কাজ না কেহ করে মূল্যায়ন
পাপী করে পাপীকেই নেকী প্রত্যয়ন ।
আমি কি হলুম আহা ভাবে খল লোকে
দর্পিত হাব ভাব দেখি তার চোখে।
বামনের চাঁদধরা মিছে অভিলাষ
ঘোড়াকে ডিঙিয়ে খায় কেউ কেউ ঘাস।
কি যে হলো কোথা গেলো সহজ জীবন
সরল সুন্দর কোথা, বুঝিবা মরণ।
বিশ্বাস মরণের পথ ধরে হাটে
বিষভরা নিঃশ্বাসে এ সময় কাটে।
ঘর পোড়া গরুগুলো দেখে কালোমেঘ
গোয়ালে আগুন বুঝি বাড়ে উদ্বেগ।
যে ভোগেছে কালা জ্বরে সে বুঝে অসুখ
দুঃখ বুঝে সেই জন যে ভোগেছে দুঃখ ।
চিকন পাতলা মার যে খেয়েছে ভাই
শত পিঠ বুলানোতে তার আশা নাই ।
চূণ খেয়ে মুখ পুড়ে দধি দেখে ভয়
আলোটুকু নিভে যায় আঁধারের জয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত