যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থগিত জনসনের টিকা
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৭ | আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫১
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার প্রয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) এ টিকা সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে। এ টিকার প্রয়োগের ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত এল। যুক্তরাষ্ট্রে টিকাটি নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধলেও ইইউ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো তেমন ঘটনা ঘটেনি। মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সতর্কতাকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আলো প্রতিনিধি জানান, জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা যাঁরা এর মধ্যে গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যসেবীরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ১৩ এপ্রিল থেকে সব কটি অঙ্গরাজ্যে এ টিকা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। টিকাদান কেন্দ্রগুলোয় ফাইজার ও মডার্নার সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে যাঁরা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা গ্রহণ করেছেন, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টের পেলে তাঁদের দ্রুত নিজ নিজ চিকিৎসকের কাছে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে।
ছয়জন টিকাগ্রহীতার দেহে বিরল রক্ত জমাটের (ব্লাড ক্লট) ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থা ১৩ এপ্রিল জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার প্রয়োগ স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এই ছয়জনের সবাই ১৮ থেকে ৪৮ বছর বয়সী নারী। টিকা নেওয়ার এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে এক নারীর মৃত্যু হয় এবং একজন সংকটাপন্ন অবস্থায় নেব্রাস্কার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ মনে করে, জনসন অ্যান্ড জনসন টিকার রক্ত জমাটের এ সমস্যা এতই বিরল যে এটি জানার পরও মানুষের টিকা নিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে তারা মনে করে, টিকার ওপর অনেক কষ্টার্জিত আস্থায় কিছুটা হলেও ফাটল ধরবে।
সতর্কতার জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা বন্ধ রাখা হলেও নির্ধারিত সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ লোকজনকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে। ফেডারেল স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, টিকা কর্মসূচি এর ফলে ব্যাহত হবে না। হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাইজার ও মডার্না টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে এবং প্রতিদিন ৩০ লাখ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ লাখের কাছাকাছি মানুষ জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েছেন এবং আরও ৯০ লাখ ডোজ দেশের নানা রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।
ফুড অ্যান্ড ড্রাগ বিভাগের বায়োলজিক ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ কেন্দ্রের পরিচালক ডা. পিটার মার্কস এবং সরকারি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান উপপরিচালক ডা. অ্যানি স্চুচ্যাট এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘অতি সাবধানতা অবলম্বনে আমরা এ টিকার ব্যবহার বন্ধ করছি। এ মুহূর্তে এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুব বিরল ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’
জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগের ঘটনায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে বলেছেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের টিকাদানের বিরতি দেওয়ার প্রস্তাবে যাঁরা টিকা নিতে অনীহা দেখান, তাঁদের আরও নিরুৎসাহিত করবে।
ইইউতেও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা স্থগিত হয়ে গেছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি এ সপ্তাহে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় টিকা সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করেছিল।
ইইউর দেশগুলোয় টিকা পাঠানোর ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে জনসন অ্যান্ড জনসন জানায়, তারা ইউরোপীয় টিকা সরবরাহ স্থগিত করেছে। যদিও ইইউ এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে লক্ষ রাখছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টিকা সরবরাহ করেছিল জনসন অ্যান্ড জনসন। দেশটির মানুষকে এ টিকা দেওয়ার পর এখনো রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার কোনো ঘটনা জানা যায়নি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দেশটির প্রায় তিন লাখ স্বাস্থ্যকর্মী জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নেন।
জনসন অ্যান্ড জনসনের মতোই ইউরোপের বাজারে সমস্যায় পড়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। দুটি টিকার ক্ষেত্রেই একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে রূপান্তরিত ও নিরীহ ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারের ফলে কয়েকটি দেশে খুব কমসংখ্যক রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া যায়। এরপর অনেক দেশ ওই টিকা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশে টিকাটি কেবল বয়স্ক ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত