মোহাম্মদ নজিবর রহমান এবং আনোয়ারার জনপ্রিয়তা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৩০ |  আপডেট  : ৭ মে ২০২৪, ১৪:৫৫

মোহাম্মদ নজিবর রহমান ও আনোয়ারা উপন্যাস

বিষাদসিন্ধুর পর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জগতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে উপন্যাস সেটি হল মোহাম্মদ নজিবর রহমান [১৮৬০ - ১৮ অক্টোবর, ১৯২৩] এর  আনোয়ারা উপন্যাসটি। মোহাম্মদ নজিবর রহমান বাংলা ভাষার একজন ঔপন্যাসিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে একজন ঔপন্যাসিক হিসাবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিকাশোন্মুখ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি গণ্য করা হয়।

তিনি তার জীবনে প্রায় ২০টি উপন্যাস রচনা করেছেন। আনোয়ারা হলো তাঁর রচিত সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস। আনোয়ারা উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সনে। ১৯৫৬ সালে ‘আনোয়ারা’ সম্পর্কে ড. মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ) এ বলেছেন।

“জনপ্রিয়তা দিয়ে যদি কোন বইয়ের বিচার করতে হয়, তাহলে মোহাম্মদ নজিবর রহমান রচিত ‘আনোয়ারা’র দাবিই সর্বাগ্রে বিবেচ্য। ১৯১১ থেকে ১৪ সালের মধ্যে এ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালে এ বইটির ত্রয়োবিংশতি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে এবং এ যাবৎ ‘আনোয়ারা’র দেড়লক্ষ কপি নিঃশেষিত হয়েছে।” 

নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন তাঁর উপন্যাসে তাঁর সমকালীন জীবন ও সমাজকে যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সে সময়কার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনা ও স্খলন-পতনকে তিনি বাস্তবসম্মতভাবে রূপায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাছাড়া মানবজীবনের কতগুলো চিরায়ত মূল্যবোধ যেমন-প্রেম, ন্যায়পরায়ণতা ও মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ ইত্যাদি তাঁর লেখায় যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। এসব কারণেই তাঁর রচনা সেসময়ে যেমন ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, তেমনি তা চিরকালীন মানুষের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে, বিশেষত তাঁর রচিত ‘আনোয়ারা' উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্লাসিক মর্যাদা পেয়েছে।

সে কালের মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের অহেতুক বৈরী মনোভাব তিনি তীক্ষ্ণভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। অন্য দিকে ১৯০৫ খ্রীস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাও তার দৃষ্টি এড়ায়নি। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ তার মনে আলোড়ন তোলে। এ রকম একটি জাতীয় প্রেক্ষাপটে তিনি বিলাতী বর্জন রহস্য নামক একটি পুস্তিকা রচনা করেন। এটি তৎকালীন বিদ্বান মহলে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল। ১৯০৬ খ্রীস্টাব্দে নওয়াব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম লীগের যে অধিবেশন বসে, তিনি তাতে অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। অপর দিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধেও ছিলেন অকুতোভয়। সলঙ্গায় শিক্ষকতা করা কালে স্খানীয় হিন্দু জমিদার গরু জবাই ও গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে এমত ধর্মীয় অধিকারহরণের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জনাতে থাকেন। তার সংগ্রামের ফলে সলঙ্গায় মুসলমানদের গরু জবাইয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তদুপরি শিক্ষা বিস্তারের মহতী কাজে তিনি আজীবন সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৮৯২ খ্রীস্টাব্দে তিনি চরবেলতৈল গ্রামে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন; যা পরবর্ততে পূর্ণাঙ্গ বালিকা বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। তার রচিত উপন্যাসসমূহ তীক্ষ্ণ সমাজ সচেতনতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করে।

নজিবর রহমান ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

গত ১৮ অক্টোবর ২০১৫ইং সিরাজগঞ্জের দৈনিক কলম সৈনিক কার্যালয়ে কথা সাহিত্যিক নজিবর রহমান সাহিত্যরত্নের ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে 'নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন একাডেমী' সিরাজগঞ্জ'র আত্মপ্রকাশ ঘটে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত