'মন খারাপের' কৌতুক ও স্বজনদের মৃত্যুতে অনুভূতি

  হাসান শান্তনু 

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১২:২৭ |  আপডেট  : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:২৫

সরকার ঘোষণা দিলো- রাষ্ট্রে সবাই সুখি। কারো দুঃখবোধ নেই, মন খারাপ থাকতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে এক নাগরিক প্রতিদিন সরকারের মুখপত্র, সরকারিগীতির 'পত্রিকা' কেনেন। বিষয়টি আরেক নাগরিকের নজরে এলো। তিনি জানতে চান- 'একই ছাঁইপাশের কথা আপনি প্রতিদিন পত্রিকা কিনে পড়েন কেনো?' ওই নাগরিক উত্তর দেন, 'সরকারি দাবি অনুযায়ী আমি যে সুখি, এটা জানতেই পত্রিকা পড়ি।' 

'কারো মন খারাপ, বলা যাবে না' বলে সরকারের পক্ষে যে মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সাঁতার জানতেন না। একদিন গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি পুকুরে নামলেন, নিজেকে 'সাম্যবাদী' প্রমাণে। মানে তিনি ও গরিব-গুরমারা 'একই পানিতে' গোসল করেন। সাঁতার না জানায় মন্ত্রী পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন। তাকে রক্ষা করেন ওই গ্রামের এক কৃষক। ঘাটে টেনে এনে মন্ত্রীর চেহারা দেখে কৃষকের মন খারাপ। বিষয়টি মন্ত্রীর চোখ এড়ালো না। তিনি বললেন, আমার মতো সফল মন্ত্রীকে তুমি রক্ষা করেছো, সারাজীবন গর্ব করতে পারবে। এতেও কৃষকের মুখে হাসি নেই।

এবার মন্ত্রী প্রশ্ন করেন কৃষককে- তোমার মন খারাপ কেনো? কৃষকের উত্তর- আপনি পানিতে ডুবে মরছিলেন, আমি টেনে ধরেছি। এটা দেশের কেউ জানলে আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। কাজটা করে আমার মন খারাপ। মন খারাপ- এটা কারো কাছে বলতে পারবো না ভেবে মনটা আরো খারাপ। উপরের দুটিই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের কৌতুক। কৌতুকের ওই কৃষক 'মন খারাপ করা কাজ বা পাপের' কী কাফফারা দিয়েছিলেন, তা পাঠকের জানা হয় না। রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের অব্যবস্থাপনার জন্য সাধারণ মানুষকে কাফফারা দিতে হচ্ছে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে। এটা পাঠকদের জানা।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার, দুর্নীতির খবরে মানুষ না হয় মন খারাপ করলেন না। স্বজনের মৃত্যু, আপনজনদের সঙ্গে দুরত্ব-বিচ্ছেদে মন খারাপ হবে- এটা চিরকালিন প্রবণতা। এতে কারোর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি গতকাল মুজিবনগর সরকার দিবসের আলোচনায় ঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি 'শ্রদ্ধা' জানিয়েছেন। এ সংবাদে দেশের শুভবোধের কোনো নাগরিকের মন খারাপ হতেই পারে। তিনি সেটা ফেসবুকে লিখতেও পারেন।

‘আজ আমার মন খারাপ’- ফেসবুকে এ জাতীয় স্ট্যাটাস দিলে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষমতা থাকবে সরকারি কর্তৃপক্ষের- এমন আইন প্রণয়নের চিন্তা একেবারেই ব্যক্তিসত্তার বিরোধী। আজকে যারা এ আইনের খসড়া সাজাচ্ছেন, যারা সমর্থন করছেন, তারাও মরণশীল। তাদের মৃত্যুতে স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের মন খারাপ হবে- এটাই স্বাভাবিক। সেটা প্রকাশের স্বাধীনতা অন্তত বজায় থাকুক।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত