মঙ্গলগ্রহের সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা

  লেখক হাসান শান্তনু

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ২০:৫৫ |  আপডেট  : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২২

 দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, টিভি স্টেশন নিউজ টোয়েন্টিফোর, অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজসহ বসুন্ধরার মালিকানার প্রচারমাধ্যমে যেসব সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী কর্মরত আছেন; তাঁদেরকে ঢালাও আক্রমণ করে ফেসবুকে একদল সাংবাদিক কুমন্তব্য করছেন। যা একেবারেই অনৈতিক, অশোভন, সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এমনকি তাঁরা স্ববিরোধি আচরণ করছেন জেনে-বোঝে। বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভির কাণ্ডের দায় কিছুতেই সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের নয়।

আনভির ঘটনার প্রতিবেদন কেন বসুন্ধরার সংবাদমাধ্যমগুলো এড়িয়ে গেলো, এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে একাডেমিক আলোচনার কোনো সুযোগ নেই, এমনকি দরকারও নেই। পাঠকের আগ্রহ; সংবাদ প্রকাশ, প্রচারের দায়বদ্ধতা- সেসব ভিন্ন প্রসঙ্গ। মালিকের নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ, প্রচার হবে না- এটা শুধু এ দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকতায় শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে প্রতিষ্ঠিত সত্য। বসুন্ধরার মালিকানায় থাকা প্রচারমাধ্যমগুলোর কথা না হয় তালিকার বাইরে থাকুক। মালিকের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো লেখা এ দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, প্রচার হয়েছে কি কোনোকালে? পৃথিবীর কোনো দেশের গণমাধ্যমে কী তা হয়? যেসব সাংবাদিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, নিউজ টোয়েন্টিফোর ইত্যাদিগুলোতে কর্মরতদের সমালোচনা করছি, তারা কী পারবো নিজেরা কর্মরত প্রচারমাধ্যমে মালিকের বিরুদ্ধে অন্তত একটাও শব্দ লিখতে?

ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনের আগের ঘটনা। ওই নির্বাচনেই নরেন্দ্র মোদি প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হন। ভারতের প্রভাবশালী একটা ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার মালিকের নির্দেশ ছিলো- বিজেপির নেতৃত্বের জোটের নির্বাচনী প্রচারণার খবর মোদির ছবিসহ তাঁর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপাতে। প্রখ্যাত সাংবাদিক সিদ্ধার্থ ভরদরাজন তখন ওই পত্রিকার শীর্ষতম পদের দায়িত্বে। তাঁর যুক্তি ছিলো- মোদির মতো উগ্র গেরুয়াবাদী রাজনীতিকের ছবি প্রগতিশীল নীতিমালায় বিশ্বাসী কোনো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো যায় না। মালিকের নির্দেশ মতে মোদির ছবি ঠিকই পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয় আর চাকরি ছাড়তে হয় সিদ্ধার্থকে।

যে কোনো ভূখণ্ডেই মালিকের স্বাধীনতাই প্রচারমাধ্যমের চূড়ান্ত স্বাধীনতা। সাংবাদিক হয়েও যাঁরা চিরকালীন এ সত্য ভুলে গেছেন, তাঁরা আসলে নোয়াম চমস্কির 'মঙ্গলগ্রহের সাংবাদিকতা' ত্বত্ত্বের চর্চা করছেন। তাঁরা এ দেশের নয়, পৃথিবীরও নয়; মঙ্গলগ্রহের সাংবাদিক। বসুন্ধরার সংবাদমাধ্যমগুলোতে এমন অনেকেই দায়িত্বরত, বা কর্মরত আছেন, যাঁদের এ দেশের সাংবাদিকতায় নি:সন্দেহে অবদান আছে। তাঁরা সাংবাদিকতাকে আজকের আধুনিকতার পর্যায়ে পৌঁছে দিতে শ্রম, মেধা দিয়েছেন। অনেকেই নিরেট সততার সঙ্গে সাংবাদিকতা করছেন। তাঁরা প্রমাণিত মানবিক মনের সাংবাদিক। তরুণদের মধ্যে এমনও আছেন, তাঁরাই হয়ে উঠতে পারেন সাংবাদিকতার আগামীর অলংকার।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত