বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট
প্রকাশ: ১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:১৮ | আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বুয়েটে প্রবেশকে ঘিরে আন্দোলন-পালটা আন্দোলন শুরু হয়। এ অবস্থায় রোববার প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। দুপুর আড়াইটার দিকে প্রায় কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে বুয়েট শহিদ মিনারে ফুল দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এ সময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বুয়েট ছাত্র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক স্থান ত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা এরপরও বুয়েট শহিদ মিনারে ফুল দেন এবং ছবি তোলেন। তবে তারা কোনো স্লোগান দেননি।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র রাজনীতিকে ফেরানোর দাবি নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করলেও তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
এসময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
দাবির প্রেক্ষিতে বুয়েটে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আংশিক দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।
এদিকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আন্দোলন শুরু করেন।
অন্যদিকে রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিবাদ সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ—হিযবুত তাহরীর, জেএমবি ও ছাত্র শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ইমেইলে দাওয়াত দিচ্ছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে শিবির দেশবিরোধী মিটিং করছে। তাই বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত একটি নাটক। এই নাটক বন্ধ করতে হবে। বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বুয়েটে জোরালোভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ওঠে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশে সক্রিয় আবরারকে শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন।
সহপাঠী হত্যার প্রতিবাদে টানা আন্দোলন শুরু করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সব ধরনের ক্রিয়াশীল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের এই বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সোমবার (১ এপ্রিল) বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি এ রিট দায়ের করেন। এবং হাইকোর্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি চলবে বলে আদেশ দেয়।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত