বিদ্রোহী-জান্তার লড়াইয়ে মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত ২০ লাখ : জাতিসংঘ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৬ |  আপডেট  : ১৫ মে ২০২৪, ২০:৫৮

জাতিসংঘের হিসাবমতে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্রোহী দলগুলোর জোটের হামলার জেরে দুই পক্ষের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমারে বাড়তে থাকা এই লড়াই-সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এদিকে রাখাইনের পাকতাও শহরে বিদ্রোহীদের ওপর সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক বলেন, তিনি সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন। দুজারিক আরো বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ২৬৬৯ অনুযায়ী, সহিংসতা বন্ধ করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছেন গুতেরেস। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে দুজারিক বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব জোর দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে এবং এই আইন লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’

শান রাজ্যে সেনা এবং পুলিশকে চীন সীমান্ত বরাবর বৃহত্তর এলাকা থেকে হটিয়ে দিতে তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোটের হামলায় অভাবনীয় সাফল্য মিয়ানমারের আশপাশের অন্যান্য বিরোধী বাহিনীকে উত্সাহিত করেছে। শান রাজ্যের দক্ষিণে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তবর্তী কায়াহ রাজ্যে জাতিগত কারেনি বিদ্রোহীরা, যারা এরই মধ্যে রাষ্ট্রের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, তারা প্রধান শহর লোইকাও আক্রমণ করছে এবং এরই মধ্যে শহরের উপকণ্ঠে বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে। স্বেচ্ছাসেবী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফএস) শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর পরাজয়ের সুযোগ নিতে তাদের নিজস্ব হামলা শুরু করেছে এবং এভাবে তারা শাসনক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তার ওপর চাপ জিইয়ে রেখেছে। জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর তুলনায় পিডিএফএস কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং অস্ত্রশস্ত্রও তেমন নেই। তবে তাদের সক্ষমতা বাড়ছে। বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জাতিগত সেনাদের সঙ্গে তারা সব সময় মিত্রতা রক্ষা করে। এই সেনারা কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লড়ে আসছে। জান্তা সরকার ভারতের সঙ্গে সীমান্তের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছে। জাতিগত চীন বিদ্রোহীরা তাদের নিজ রাজ্যে আধিপত্য করছে এবং সম্প্রতি রিখাওদার সীমান্ত শহর দখল করেছে। আরো দক্ষিণে আরাকান আর্মি তাদের যুদ্ধবিরতি শেষ করে সেনা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে আক্রমণ শুরু করেছে। ওদিকে, মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরেক জাতিগত বাহিনী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নও থাই সীমান্তে সেনা ফাঁড়ির ওপর হামলা জোরদার করছে। সর্বদক্ষিণের রাজ্য তানিনথারিতেও সেনাদের ওপর এখন নিয়মিত বিদ্রোহী হামলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে রাখাইন রাজ্যে বঙ্গোপসাগরের একটি বন্দর নগর পাকতাও বিদ্রোহীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করতে আকাশ ও সমুদ্রপথে আক্রমণ করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। শুক্রবার মিয়ানমার-বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী স্থানীয় এক বাসিন্দাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি শহরটি দখল করেছিল। তাদের কাছ থেকে এটি পুনরুদ্ধারে আক্রমণ শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। 

বৃহস্পতিবার পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীদের থ্রি ব্রাদারহুড জোট টেলিগ্রামে বলেছে, নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে হেলিকপটার ও কামান দিয়ে পাকতাও শহর আক্রমণ করেছে সামরিক বাহিনী। বিদ্রোহীদের জোট বলেছে, বিকালের দিকে জান্তা বাহিনী শহরের ভেতরে ঢুকে গুলি চালায় এবং বেসামরিক মানুষদেরকে হত্যা করে। জান্তা সরকারের মুখপাত্রের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সমন্বিতভাবে জান্তাবিরোধী ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করেছে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এই অভিযান দেশটির সামরিক সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি শহর এবং সামরিক পোস্ট দখল করেছে বিদ্রোহীরা। চীনের সীমান্তবর্তী শান রাজ্য থেকে এই সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত