বিচারকের সঙ্গে এ ধরনের বেয়াদবি মেনে নেয়া যায় না: হাইকোর্ট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪১ |  আপডেট  : ৩ মে ২০২৪, ১৮:৫৫

বিচারকের সঙ্গে পিরোজপুরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন অসদাচরণ করায় প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আবু জাফর মো নোমান।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) সেই অভিযোগ শুনানির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের আদালতে পাঠান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এর ওপর শুনানির সময় বিচারকের সঙ্গে এ ধরনের বেয়াদবি মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি জে বি এম হাসান। তিনি আরও বলেন, পিপিরা যদি এমন আচরণ করেন তবে সাধারণ আইনজীবীরা কী করবেন।

লিখিত অভিযোগে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো নোমান জানান, এজলাসে বিচারকার্য চলাবস্থায় এহসান রিয়াল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের উপদেষ্টা আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকের জামিনের দরখাস্ত শুনানির সময় ২৫-৩০ জন বিজ্ঞ আইনজীবী নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। এসময় এজলাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করে শুনানি গ্রহণের স্বার্থে ১৫ মিনিটের বিরতি দেন তিনি।

বিরতি শেষে আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকের নিয়মিত জামিন শুনানি শুরু করলে ফের অভিযোগকারী (বাদী) ও আসামি উভয়পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে পুনরায় এজলাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করে শুনানি গ্রহণের স্বার্থে ১০ মিনিট মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

১০ মিনিটের বিরতি শেষে স্বাভাবিক বিচারকার্য পরিচালনার স্বার্থে মামলার অভিযোগকারী (বাদী) পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী মো. সাইদুর রহমান টিটো এবং আসামিপক্ষের নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবী মো. হেমায়েত উদ্দিন ও শ ম হায়দার আলীকে তাদের পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীদের কিছু সময়ের জন্য এজলাসের বাইরে অবস্থান করার অনুরোধ করা হয়। পরে উভয়পক্ষের প্রয়োজনীয় আইনজীবী ব্যতীত অন্য আইনজীবীরা কিছু সময়ের জন্য এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। 

কিন্তু তখন পিরোজপুরের পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন ও তার সহযোগী কিছু বিজ্ঞ আইনজীবীকে নিয়ে এজলাসে অবস্থান করলে অন্যান্য আইনজীবীরা আপত্তি প্রকাশ করেন। তখন সিজেএম আবু জাফর এজলাসের প্রিজাইডিং বিচারক হিসেবে স্বাভাবিক বিচারকার্য পরিচালনার প্রয়োজনে মো. আলাউদ্দিনকে অনুরোধ করে বলেন, আপনি যেহেতু উল্লেখিত মামলার বাদী বা আসামি কোনো পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী না সেহেতু আপনি স্বাভাবিক বিচারকার্য পরিচালনার স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য এজলাসের বাইরে অবস্থান করে সাহায্য করুন।

এসময় বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে হঠাৎ এজলাসে উচ্চস্বরে বিভিন্ন মন্দ ভাষায় হুমকি-ধামকি প্রদান করে তার পিপিশীপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে বিচারকার্যে বাধা প্রদান করেন। এসময় বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর সিজেএম আবু জাফরকে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্যও হুমকি প্রদান করেন এবং একপর্যায়ে গালমন্দ করে জোরপূর্বক বিচারকার্য সাময়িক বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে হট্টগোল করতে থাকেন।  

ফলে এজলাসে কর্মরত কর্মচারীবৃন্দের ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এজলাসে উপস্থিত কয়েক জন বিজ্ঞ আইনজীবীর হস্তক্ষেপে বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন আমার এজলাস ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন সাম্প্রতিক সময়ে তার পিপিশীপের কর্তৃত্ব দেখিয়ে পিরোজপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেন্সিতে কর্মরত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দের সঙ্গেও প্রকাশ্য এজলাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত