বিএনপিকে ভোটে আনতে আমেরিকার ‘শেষ চেষ্টা’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:০৮ |  আপডেট  : ১ মে ২০২৪, ০৩:৩১

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও ঢাকায় নিযুক্ত মা‌র্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।ফাইল ছবি

চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর ভোটগ্রহণ হতে পারে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথমার্ধে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এমন আলোচনা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হলে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ২২ থেকে ২৬টি নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ইতিমধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তারা সরকার পতনের দাবিতে টানা আন্দোলন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে রেখেছে দলটি।

সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন কার্যত ব্যর্থই বলা যায়। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই জেলে। রাজপথে দলটির নেতা-কর্মীদের দৃশ্যমান কোনো উপস্থিতি নেই। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ‘দিতে হয় তাই দিচ্ছি’ টাইপের কর্মসূচি ঘোষণা হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে এমন কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে যখন তফসিল ঘোষণার দুদিন বাকি তখন আমেরিকার দৌড়ঝাঁপ বেশ জোরেশোরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শর্তহীন সংলাপে বসতে আহ্বান জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছে। আজ হয়তো আওয়ামী লীগকেও একই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া এই তিন দলের সঙ্গে বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস আলোচনায় বসার কথাও বলেছেন। তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে আমেরিকার এমন সব উদ্যোগ রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেননা এই তিন দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। জাতীয় পার্টিতেও চলছে প্রস্তুতি। কেবল বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না তাই নিয়ে আছে সংশয়। যদিও ২০১৮ সালে সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি জোট শেষ পর্যন্ত সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়েছিল।

তিন দলকে দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে আমেরিকান দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় আমেরিকা। এতে সবপক্ষকে সহিংসতা পরিহার ও সহনশীল থাকার অনুরোধ জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, আমেরিকা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেয় না। এছাড়াও সবগুলো পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বানও জানানো হয়েছে চিঠিতে। তাছাড়া নির্বাচনে বাধা দেওয়াদের জন্য মার্কিন ভিসানীতির বিষয়টিও চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তফসিলের আগ মুহূর্তে আমেরিকার এমন উদ্যোগের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এক. বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। দুই. তফসিল ঘোষণা আরও কিছুদিন পিছিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা।

অবশ্য নির্বাচন কমিশন গতকাল সোমবারও বলেছে তফসিলের জন্য আরও দুদিন অপেক্ষা করতে। অর্থাৎ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। তফসিল ঘোষণা হলে সব কিছুই নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যস্ত হয়ে পড়বে নির্বাচন নিয়ে। তাদের জোটের ও সমমনা দলগুলোতে শুরু হবে নির্বাচন প্রস্তুতি। অন্যদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ সরকারের মধ্যে নেই। নেবেও না। সরকার ও সরকারি দল, বিএনপি আসবে না ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ অবস্থায় তফসিল হয়ে গেল আর বিএনপি নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে আন্দোলন চালিয়ে গেলে তাদের ওপর সরকারের চাপ যেমন বাড়বে, তেমনি আমেরিকার ভিসানীতিতে যে শর্ত রয়েছে সেখানে বিএনপির নেতাদের ওপরও তা কার্যকরে চাপ তৈরি হতে পারে। 

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের ট্রেনে তুলে দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আমেরিকার কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া সংলাপের মধ্যে তফসিল ঘোষণাকে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না, সেটাও স্বাভাবিক। কেননা তখন প্রশ্নের তীরবিদ্ধ হবে নির্বাচন কমিশন। বলা হবে, সমাধানের পথ যখন তৈরি হচ্ছে তখন তফসিল ঘোষণা করে কমিশন একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার হয়ত আওয়ামী লীগকে চিঠি পাঠাবে আমেরিকান দূতাবাস। এরপর আরও এক বা দুদিনের মধ্যে শর্তহীন সংলাপ আর আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তিন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক কখন–কীভাবে হয় তাই দেখার বিষয়।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত