বাকস্বাধীনতা-অভিবাসন নিয়ে ইউরোপকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের আক্রমণ

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১২ | আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:২৪

ইউরোপীয় গণতন্ত্রের ওপর তীব্র আক্রমণ করেছেন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি বলেছেন, এই মহাদেশের সবচেয়ে বড় হুমকি রাশিয়া এবং চীন নয়। বরং এর হুমকি ভেতর থেকে’।
ইউরোপকে “অভ্যন্তরীণ হুমকি” সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, ইউরোপীয় সরকারগুলো চরম সেন্সরশিপ চালাচ্ছেন এবং তারা “নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া অভিবাসন” পরিস্থিতি যথার্থভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের ওপর আক্রমণ ও সতর্ক করে ভ্যান্স এমন বক্তৃতা দেন। যদিও আশা করা হয়েছিল তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সম্ভাব্য আলোচনার কথা বলবেন।
শনিবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ভ্যান্স তার বক্তব্যের বেশিরভাগ সময় ইউরোপীয় সরকারগুলিকে, যুক্তরাজ্যসহ তাদের মূল্যবোধ থেকে পিছু হটতে এবং অভিবাসন এবং বাকস্বাধীনতার বিষয়ে ভোটারদের উদ্বেগ উপেক্ষা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
ভ্যান্সের ভাষণের সময় সম্মেলনে নীরবতা নেমে আসে। তার বক্তব্যের পর সম্মেলনে বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ বক্তব্যের বেশি কিছু বিষয়ের নিন্দা করেন।মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সেই নীতির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ইউরোপকে ‘নিজের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসতে হবে’।
তিনি বলেন, “ইউরোপে যে হুমকি সম্পর্কে আমি উদ্বিগ্ন ইউরোপ, রাশিয়া বা রাশিয়া ইউরোপ নয়, ইউরোপ চীনও নয়, এটা কোনো বাইরের দেশের কেউ নয়। আমি যা নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হলো ভেতর থেকেই হুমকি, তাদের কিছু মৌলিক মূল্যবোধ থেকে ইউরোপের সরে আসা যে মূল্যবোধগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও অভিন্ন।"
ন্যাটোর মিত্র রাষ্ট্র রোমানিয়া যে রাশিয়ার অপতথ্যের প্রমাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেছে, ভ্যান্স তার নিন্দা করেন বলেন, “আপনাদের গণতন্ত্র যদি বাইরের দেশের কয়েক লক্ষ ডলারের বিজ্ঞাপন নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে গোড়া থেকেই তা যথেষ্ট মজবুত ছিল না। তিনি আরো বলেন, “আমি আমার ইউরোপীয় বন্ধুদের বলবো বিষয়টির প্রেক্ষাপট দেখার জন্য”।
তিনি বাহ্যত ডানপন্থি দলগুলোর প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন, দলগুলোকে ইউরোপের সরকারগুলোতে যোগ দিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, ভ্যান্সের ভাষণ বার্ষিক সম্মেলনে স্বাভাবিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা আলোচনা থেকে বিচ্যুতি।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা ক্যালাস ভ্যান্সকে ইউরোপের সঙ্গে ‘লড়াই শুরু করার চেষ্টা’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
রাশিয়ায় নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল পলিটিকো ভ্যান্সের মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ বলে জানিয়েছেন।
ভ্যান্স তার ২০ মিনিটের বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশকে চিহ্নিত করেছিলেন।
বক্তব্যে তিনি ধার্মিক ব্রিটিশদের মৌলিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
ভ্যান্স বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অত্যন্ত জরুরি সব চ্যালেঞ্জের মধ্যে “অভিবাসন চ্যালেঞ্জের চেয়ে আর বড় কিছু নেই।"
সম্মেলনে উপস্থিত নেতা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা আশা করছিলেন যে ভ্যান্স ইউক্রেন ও রাশিয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে আলোকপাত করবেন। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে সামান্যই মন্তব্য করেছেন।
ভ্যান্স বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন, “ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং বিশ্বাস করেন যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আমরা একটা যুক্তিসঙ্গত নিস্পত্তিতে পৌঁছাতে পারব। আর আমরা এটাও মনে করি যে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আগামী বছরগুলিতে ইউরোপ তার নিজের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আর বড় ভূমিকা পালন করবে।"
ভ্যান্সের ভাষণের পর জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ইউরোপীয় নীতিকে ভ্যান্স যেভাবে তুলে ধরেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, “আমি যদি ঠিক মতো বুঝে থাকি তা হলে তিনি ইউরোপের কিছু অংশের অবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী অঞ্চলগুলির সঙ্গে তুলনা করছেন… সেটা গ্রহণযোগ্য নয়”।
পিস্টোরিয়াস সরাসরি ভ্যান্সকে সম্বোধন করে বলেন, ‘মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট সমগ্র ইউরোপের গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।’
ভ্যান্স পরে সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেন, যা মূলত রাশিয়ার পূর্ণ-স্কেল আক্রমণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
জেলেনস্কি বৈঠকের সময় বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে আরও কাজ করা প্রয়োজন।
ট্রাম্প বলেছিলেন মার্কিন, রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা মিউনিখে মিলিত হবেন। কিন্তু মস্কো জানিয়েছে, তারা শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত