বাংলাদেশ নিয়ে তৎপর পাকিস্তান
প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৩৩ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩১
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এরপরই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তৎপর হয়েছে পাকিস্তান। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে দেশটিতে হচ্ছে উচ্চপর্যায়ের নানা বৈঠক।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশে দায়িত্বপালন করা সাবেক কূটনীতিকরাও অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ইতোমধ্যেই রোডম্যাপ ও কৌশলপত্র প্রস্তুত করেছে পাকিস্তান।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূতসহ পাকিস্তানের কূটনীতিকরা দেশটির সরকারের জন্য একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছেন। ঢাকায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য একটি রোডম্যাপও তৈরি করেছেন তারা।
রোববার তারা এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছেন, সম্প্রতি ঢাকায় রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন এবং পাকিস্তানের কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে অতীতে দায়িত্বপালন করা পাকিস্তানের সাবেক হাইকমিশনার এবং অবসরপ্রাপ্ত অন্যান্য কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, একটি সূত্র জানিয়েছে, কীভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায় সে বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে তথ্য ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই বৈঠক ডেকেছিলেন।
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়াকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার সূচনা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে যদিও ইসলামাবাদ বারবারই ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে, কিন্তু হাসিনা সেই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেন।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবের কন্যা ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তিনি প্রায়ই পাকিস্তানের নানা বিষয়ে নয়াদিল্লির সাথে পরামর্শও করতেন। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ভারতের জন্য গুরুতর ধাক্কা হলেও এটি পাকিস্তানের জন্য বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের একটি বড় সুযোগ। আর সম্পর্কের সেই উত্তরণ ঘটানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা পাকিস্তান সরকারের কাছে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কাছে হস্তান্তর করা কৌশলপত্রটিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে রোডম্যাপ প্রদান করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সৃষ্ট এই পরিস্থিতির সুবিধা নিতে হবে। তবে সেটি করতে হবে সতর্কতা এবং দক্ষ কূটনীতির সাথে।
অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা আরও প্রস্তাব করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারতের দৃষ্টিতে দেখা উচিত হবে না পাকিস্তানের। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ধরন যেমনই হোক না কেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই তার নিজস্ব পথ ও কৌশল অনুসরণ করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং তাদের বর্তমান বৈরিতা সত্ত্বেও উভয় দেশের মধ্যে কিছু কাজের সম্পর্কও থাকতে হবে ।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, অতীতে এমন ধারণাও বিদ্যমান ছিল যে— হাসিনার মেয়াদে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির কারণে ঢাকায় হাইকমিশনার হিসাবে উপযুক্ত ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাদের নিয়োগ বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। এ বিষয়ে পাকিস্তানের একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা বলেন, ‘এটা পরিবর্তন হওয়া উচিত। আমাদের অবশ্যই ঢাকাকে একটি স্টেশন হিসাবে বিবেচনা করতে হবে, যার অর্থ হাইকমিশনারের পদটি একজন যোগ্য কূটনীতিকের কাছেই যেতে হবে।’
এদিকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বহু বছরের মধ্যে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে এটিই প্রথম কোনও যোগাযোগ।
এছাড়া সাম্প্রতিক ওআইসি সম্মেলনের ফাঁকেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবরা একে-অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত