জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা

‘বাংলাদেশ গণতন্ত্র, আইনের শাসন নিশ্চিত করে যাবে সরকার’  

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪২ |  আপডেট  : ১ মে ২০২৪, ১৩:২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনেরশাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে। স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সকলের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সকলকেআইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে, জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় আমরা সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বছর আমরা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী পালন করছি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্ব মানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সকলের জন্য সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য, আমাদের অবশ্যই বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহু পাক্ষিকটা বেছে নিতে হবে।

শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতে বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জোরদারকরণ, জাতিসংঘের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালন করার জন্য প্রচেষ্টা ও সাহসী বক্তব্য, এবং বৈশ্বিক সঙ্কট উত্তরণে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসেকে সাধুবাদ জানান। 

এ বছর সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন: আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করে ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং এর আওতাধীন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের মাধ্যমে সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ও জটিলতার প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী  খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে । জটিল এই সন্ধিক্ষণে বৈশ্বিক সংহতি রক্ষার্থে আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে আপনার আহ্বান আমাকে এই পরিষদে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ভাষণের একটি বিশেষ উক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেছিলেন, ‘সাম্প্রতিককালে গোটা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে আমাদের আরও ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত...। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে আমাদের মধ্যে মানবিক ঐক্যবোধ-ভ্রাতৃত্ব বোধের পুনর্জাগরণ। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার স্বীকৃতিই কেবল বর্তমান সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধান ঘটাতে সক্ষম। বর্তমান দুর্যোগ কাটাতে হলে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর "সামিট অব দ্য ফিউচার" আহ্বান করার উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এই প্রক্রিয়াটি ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তার দেখানো পথে বাস্তবমুখী নীতি গ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজিঅর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। করোনা ভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সঙ্কট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলিকে বহুগুণে জটিল করেছে।

সে কারণে, এই বছর জাতিসংঘ এসডিজি সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক ঘোষণা ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো লক্ষ্যগুলির সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি এটি সঙ্কটের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থিক চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়।

তিনি বলেন, আজ এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো আমাদের জরুরি ভাবে প্রয়োজন যা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তাছাড়া, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলির ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।  

তিনি উল্লেখ করেন, ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।

করোনা মহামারি এবং মহামারি-পরবর্তী সময়ে জাতীয় পর্যায়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা বেশ কিছু কঠোর আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত