বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ করেছে যুক্তরাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ | আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৮
অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হওয়ার পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা–সংক্রান্ত ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর জেরে দেশটির বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় দুই দেশের শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন বাতিল বা সাময়িকভাবে স্থগিত করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে তালিকাভুক্ত করে ভর্তিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনার সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ভর্তিচক্র আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন স্থগিত করেছে
-
ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার: ২০২৫ সালের অটাম সেশন পর্যন্ত পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের সব ধরনের আবেদন স্থগিত।
-
ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে স্নাতকের শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করছে না।
-
ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন: পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত।
-
লন্ডন মেট্রোপলিটন, সান্ডারল্যান্ড, অক্সফোর্ড ব্রুকস, বিপিপিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সিএএস লেটার দিচ্ছে না বা আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে।
-
সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আবেদন স্থগিত।
-
হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ।
লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, তাদের ভিসা নাকচ হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি।
কঠোর নীতির কারণ কী?
গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস নতুন ‘ভিসা কমপ্লায়েন্স’ নীতি চালু করে। এতে বলা হয়, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভিসা আবেদনের ৫ শতাংশের বেশি নাকচ হলে তাদের স্পনসর লাইসেন্স ঝুঁকিতে পড়বে। আগে এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিত থাকার হার এবং মাঝপথে কোর্স ত্যাগের হারও মূল্যায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়:
-
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হার ২২%,
-
পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ১৮%, যা নতুন সীমার দ্বিগুণেরও বেশি।
-
হোম অফিস এ সময় মোট যে ২৩,০৩৬টি ভিসা নাকচ করেছে, তার অর্ধেকই দুই দেশের শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার হারও বেড়েছে—এদের অধিকাংশই কাজ বা স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে পরবর্তীতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
প্রভাব পড়ছে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ওপর
লাহোরভিত্তিক অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেন, যাচাই–বাছাইয়ের কঠোরতা বাড়ায় অনেক প্রকৃত শিক্ষার্থীর আবেদন শেষ মুহূর্তে আটকে যাচ্ছে—যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাডমিশনের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি আবেদন বন্ধ করলেও শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করেন, কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসাকে আশ্রয় প্রার্থনার পথ হিসেবে ব্যবহার করায় দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উচিত যুক্তরাজ্যের ছাত্র ভিসাকে ‘ট্রানজিট রুট’ হিসেবে ব্যবহার না করে সঠিকভাবে পড়াশোনা সম্পন্ন করা।
যুক্তরাজ্যের এই নতুন নীতি আগামী বছর আরও কঠোর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ফলে দুই দেশের শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে প্রভাব আরও স্পষ্ট হতে পারে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত