বাংলাদেশের নাইহুড স্যার ফজলে হাসান আবেদ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:১৬ |  আপডেট  : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৩৭

স্যার ফজলে হাসান আবেদ, কেসিএমজি (২৭ এপ্রিল ১৯৩৬ - ২০ ডিসেম্বর ২০১৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি সমাজকর্মী এবং বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা। সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট, লিও তলস্তয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পদক, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুবুল হক পুরস্কার এবং গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের নোবেল বলে খ্যাত ইয়াইদান পুরস্কার লাভ করেছেন। 

২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের "বিশ্বের ৫০ সেরা নেতার তালিকা"য় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। অশোকা তাঁকে বৈশ্বিক সেরাদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি স্বনামধন্য গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল অন্ট্রপ্রনোরশিপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারিদ্র বিমোচন এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সবচেয়ে সম্মানিত অর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জের নাইট কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডের রাজা তাঁকে নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করেন।

তিনি অসংখ্য সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন, তন্মধ্যে রয়েছে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স (২০০৭), কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লজ (২০০৮), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লেটার্স (২০০৯) ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লজ (২০১৪)।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায়, সবহারানো মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কল্পে 'Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee' বা সংক্ষেপে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধের পর সিলেটের শাল্লায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসরত লোকজনকে দেখতে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি শাল্লায় উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭৩ সালে সাময়িক ত্রাণকার্যক্রমের গণ্ডি পেরিয়ে ব্র্যাক যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন 'BRAC'-এই শব্দসংক্ষেপটির যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়, সেটি হল 'Bangladesh Rural Advancement Committee'। বর্তমানে ব্যাখ্যামূলক কোনো শব্দসমষ্টির অপেক্ষা না রেখে এই সংস্থা শুধুই 'BRAC' নামে পরিচিত। কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ, এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হল। বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন, এবং আবেদ ২০০১ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে ৬৫ বছর বয়সে নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর ব্র্যাকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ তাকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করে। পরবর্তীতে তিনি ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদেরও চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

প্রভাব, উদ্ভাবনশীলতা, টেকসই সমাধান এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের নিরিখে জেনেভা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা এনজিও অ্যাডভাইজার ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর ব্র্যাককে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক বাংলাদেশ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন পদ থেকে অব্যহতি নেন এবং চেয়ার এমেরিটাস পদ গ্রহণ করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত