বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে বড় আকারের সংস্কার করার পরামর্শ আইএমএফের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:৩১ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯

বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে বড় আকারের সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও রাজস্ব সংগ্রহে গতি আনা।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে সফরকারী বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল ও আইএমএফের কর্মকর্তাদের মধ্যে আয়োজিত বেশ কয়েকটি বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। গত জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার পর ২ পক্ষের মধ্যে এটাই প্রথম আলোচনা।

এই ঋণ পেতে হলে বাংলাদেশকে আগামী ৩ বছরে কী কী উদ্যোগ নিতে হবে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এ মাসের শেষে আইএমএফের একটি দল ঢাকা সফরে এলে বিস্তারিত আলোচনার পর ঋণের শর্তগুলো চূড়ান্ত হবে বলে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা জানান।

নাম না প্রকাশের শর্তে এই কর্মকর্তা লেন, 'আইএমএফ মৌখিকভাবে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। তারা এটাও জানিয়েছে, চাইলে বাংলাদেশ যে পরিমাণ ঋণ চেয়েছে, তারচেয়ে বেশিও পেতে পারে।'তিনি জানান, আইএমএফের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কয়েকটি দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মতো এতটা দুরবস্থায় নেই।

তবে আইএমএফ উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হতে হলে বেশ কিছু বাধাবিপত্তি জয় করতে হবে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, আইএমএফ বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতের সংস্কার করার অনুরোধ জানিয়েছে।

তিনি জানান, আইএমএফ আরও একবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনা করার পদ্ধতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।

সংস্কার বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ জানান, যেকোনো ধরনের সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হবে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়েনেট এম সায়েহ ও আইএমএফ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের সঙ্গে বৈঠক করে।

সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তার জন্য দেড় বিলিয়ন করে ৩ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। বাকি দেড় বিলিয়ন চাওয়া হয়েছে আইএমএফের নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল (ট্রাস্ট) থেকে।

আইএমএফ বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমকে গতিশীল করার অনুরোধ জানিয়েছে, কারণ দেশে কর বনাম মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত অনেক কম।

এই অনুপাত দীর্ঘদিন ধরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে আছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন এবং বিশ্বের সবচেয়ে কম অনুপাতের মধ্যে অন্যতম।

রাজস্ব বাড়াতে আইএমএফ ভ্যাট অবকাঠামোর সরলীকরণ, রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও বড় করদাতাদের কাছ থেকে ঠিকমতো কর আদায় করতে না পারার ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনার মতো লক্ষ্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।

আইএমএফ আরও উল্লেখ করেছে, ব্যাংকিং খাতে উচ্চ মাত্রার 'নন-পারফর্মিং ঋণ' বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ সমস্যা অনেকটাই প্রকট। আইএমএফ এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগের সুপারিশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতে ২০২১ সালে এর আগের বছরের চেয়ে নন-পারফর্মিং ঋণের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা হয়েছে।

আইএমএফ যেসব সংস্কার কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো, করপোরেট সুশাসন আরও বলিষ্ঠ করা, বর্তমান অবকাঠামোর ওপর তদারকি আরও কঠোর করা ও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, ঋণদাতাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আরও বলিষ্ঠ সহযোগিতা ও ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রণোদনা নিশ্চিতের জন্য আইনি ব্যবস্থার যথোপযুক্ত সংস্কার।

বাংলাদেশ ও আইএমএফের মধ্যে ঋণ চুক্তি সই হলে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের কাছে একটি ঋণ পরিকল্পনা পাঠানো হবে। সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস সময় লাগে। নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদনের পর ঋণ বিতরণ করা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনা মহামারির মন্দা থেকে পুনরুদ্ধার হওয়ার সময় ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়। এই যুদ্ধে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন দেখা দেয় এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

এ ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত ৪ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছিল।

চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও অন্যান্য ঋণদাতাদের কাছ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পাওয়ার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত