মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির

বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে দেবো না

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫৯ |  আপডেট  : ৬ মে ২০২৪, ০৯:২৫

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, কোরআনের শাসন দিয়ে তো বাংলাদেশ চলবে না। আমাদের তো একটি সংবিধান আছে। তারা (মৌলবাদী) দরকার হলে আফগানিস্তান-পাকিস্তানে চলে যাক। কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা আফগানিস্তান বানাতে দেবো না।

রবিবার (২৮ জানুয়ারি) ‘স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

শাহরিয়ার কবির বলেছেন, থার্ড জেন্ডার তো পাঠ্যপুস্তকে রয়েছে। থার্ড জেন্ডার আমাদের সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে। থার্ড জেন্ডার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। স্রষ্টাই এভাবে মানুষকে তৈরি করেছে। আপনি স্রষ্টার সৃষ্টির বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়াবেন নাকি? তারা যেভাবে কোরআনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তারা কে কোরআনের ব্যাখ্যা দেওয়ার এবং সেটা আমাকে মানতে হবে কেন?

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রকাশিত সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরিফার গল্প’ নামে একটি রচনা রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দেওয়ার জন্য। পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ এবং তথ্যগত ত্রুটি সম্পর্কে বিভিন্ন দৈনিকের কিছু প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে, যা নতুন কোনও বিষয় নয়। এ ধরনের ত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধন করা যায় এবং করা উচিতও। পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের ত্রুটি কখনও কাম্য নয়। কিন্তু গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব আলোচনার এক পর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের উপরোক্ত রচনাটি ছিঁড়ে ফেলে গণমাধ্যমের সামনে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনও কারণ নেই। তার এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা হেফাজতিরা এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক নাগরিক সমাজের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে এবং সাধারণ পাঠক্রম যুগোপযোগী করার প্রয়োজনে বর্তমান পাঠক্রমে যে সব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা সাধারণভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এরপরও ‘৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীরা যেভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে, এটাকে কঠোরভাবে দমন করা না হলে দেশ ও জাতির সামনে সমুহ বিপদ অপেক্ষা করছে।আমরা আশা করবো পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যে সব ভ্রান্তি আছে তা দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে, কিন্তু কোনও অবস্থায় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবি মেনে কোনও রচনা বা বিষয় প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করা যাবে না।

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, লিঙ্গ বৈষম্যের ব্যাপারে আপাতদৃষ্টিতে যে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে, সেখানে তারা থার্ড জেন্ডার, ট্রান্সজেন্ডার এবং ট্রান্সজেন্ডার থেকে সমকামীতা নিয়ে আসছে। কিন্তু এগুলো কোনও বিষয় নয়। সেদিনের আলোচনায় তাদের মূল বিষয় ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি থাকতে পারবে না, সমতাভিত্তিক শিক্ষানীতি থাকতে পারবে না৷ তাদের ভাষায় ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গের কোনও স্বীকৃতি নেই। তারা সমতাভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চায় না, পাঠ্যক্রম চায় না। এটা করে তারা সংবিধানকে শুধু আঘাত করেনি, বাংলাদেশের অস্তিত্বকেও আঘাত করেছে। লড়াইটা হচ্ছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এখানে সরকার যদি কোনও রকম সমঝোতা করে, সেটা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে।

কাওমি মাদ্রাসায় এখনও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা বলেছে জাতীয় সংগীত গাওয়া হারাম। জাতীয় সংগীত হিন্দুরা লিখেছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটা বাংলাদেশ। এটা পাকিস্তান নয়, এটা মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান নয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, পাঠক্রম নিয়ে বিতর্ক চলছে আজ প্রায় ৮০ বছর। বঙ্গবন্ধুর সরকার ব্যতীত আর কোনও সরকার শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি বা পাঠক্রম দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। উপমহাদেশে, ভারতে এই বিতর্ক এখন চরমে। যে সব দেশে গণতন্ত্র স্থিতিশীলতা পেয়েছে এবং দৃষ্টিভঙ্গি মোটামুটি সেক্যুলার সে সব দেশে পাঠক্রম নিয়ে বিতর্ক হ্রাস পেয়েছে। যুগোপযোগী পাঠক্রম তৈরির জন্য সেখানে আলাদা সংস্থা আছে।

বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সবাই আসিফ মাহতাবকে শিক্ষক হিসেবে সম্মোধন করলেও আমি তাতে একমত নই। তার কর্মকাণ্ড শিক্ষকসুলভ নয়। তিনি যা করেছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান।

অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে আকাঙ্ক্ষা আমাদের, সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা যেন একটি অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাক্রমের ভেতর দিয়ে তরুণদের ভেতরেও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করতে পারি।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট মমতাজ লতিফ।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত