বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা, গ্রেপ্তার–আতঙ্ক
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০৪ | আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২১:১৪
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতপরিচয় সাড়ে তিন হাজারজনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বাঁশখালী থানায় মামলা দুটি হয়।
এদিকে গুলিতে আহত অন্তত ৩০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার–আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ।
এর আগে গতকাল ঘটনার তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে ৩ লাখ এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেয় এস আলম কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন তিন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। গতকাল বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে।
বাঁশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে। এখানে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সওগাত ফেরদৌস বলেন, ‘আহত অবস্থায় অনেককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন।’ তিনি জানান, নিহত চারজন হলেন আহমেদ রেজা (১৮), রনি (২২), শুভ (২৪) ও মো. রাহাত (২২)। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মো. রায়হান (১৮) নামের এক শ্রমিককে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিকেরা হলেন আমিনুল ইসলাম (২৫), মো. আমির (২৪), মো. দিদার (২১), মো. বিল্লাল (২৬), মো. আযাদ (১৮), মো. কামরুল (২৬), শিমুল (২৮), শাকিল (২৩), মোরাদ (২৫), মিজান (১৮), রাহাত (২৮), হাবিবুল্লাহ (১৮), হাসান (৪০) ও অভি (২০)। একই হাসপাতাল ভর্তি হওয়া আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন মো. ইয়াসির (২৪), আহমদ কবির (২৬) ও আসদুজ্জামান। তিনজনই গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) শীলাব্রত বড়ুয়া বলেন, শ্রমিকেরা গুলিবিদ্ধ হন। আর পুলিশ সদস্যদের জখম ইট ও পাথরের আঘাতে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলাউদ্দিন আজ রোববার সকালে বলেন, আহত ব্যক্তিরা সবাই চিকিৎসাধীন।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির আজ সকালে বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের ঘটনায় বাঁশখালী থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল রাতে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারজনকে আসামি করা হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের চিফ কো–অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৪০ থেকে ১ হাজার ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে দুই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত রয়েছে উল্লেখ করে ওসি শফিউল কবির বলেন, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা গ্রেপ্তার–আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনায় জড়িত না থাকলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করবে—সেই ভয়ে আছেন। পুলিশের গুলিতে তাঁদের সহকর্মী মারা গেছেন, উল্টো তাঁরাই আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় গ্রামবাসী আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়েছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত