বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:১৪ |  আপডেট  : ১১ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৪৬

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সূচনাকালে তাহাকে দেখিয়াছি। তখন নব–নিঃসৃত নির্বতরের মতো সে ছিল ক্ষীণ–ধারা, বনস্পতির প্রসাদ–চ্ছায়ায় তাহার প্রবাহ বহিত। অবশেষে একদা পূর্ণতা লাভ করিয়া নিজের ঐশ্বর্য্যের যখন সে প্রতিষ্ঠিত হইল তখনও তাহাকে দেখিলাম। কিন্তু সেদিনও মনের মধ্যে আশঙ্কা ছিল। কেননা বাংলাদেশের পলি মাটিতে যেমন কোনো কীর্ত্তিমন্দির স্থায়ী হয় না তেমনি মিলনী শক্তির অভাবে আমাদের দেশে কোনো জনসংসদ পাকা হইয়া টিকিতে পারে না, রন্ধ্রে রন্ধ্রে দলবিরোধের দুর্ব্বার বীজ তাহার ভিত্তিতে ভিত্তিতে গ্রন্থি বিদারণকারী বিনাশকে পরিপুষ্ট ও প্রসারিত করিতে থাকে। বোধকরি একমাত্র বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ভাগ্যেই এরূপ দুর্যোগ ঘটে নাই। এ পর্যন্ত যাঁহারা তাহাকে রক্ষা করিয়া আসিয়াছেন তাঁহারা শক্তিশালী পুরুষ। তথাপি তাঁহাদের নিজের শক্তিই ইহাকে সন্ধিভেদ হইতে রক্ষা করিতে পারিত না। বস্তুত বাঙ্গালির চিত্ত ইহাকে গভীরভাবে রক্ষা করিয়াছে। সাহিত্য বাঙালির সত্য সম্পদ, সাহিত্যে বাঙালি আপন গৌরব উপলব্ধি করে। বাংলাদেশে সাহিত্য পরিষৎ আপন স্বাভাবিক আশ্রয় পাইয়াছে। তাই আজ আটত্রিশ বৎসর কালের অভ্যর্থনার দ্বারা জয়যুক্ত এই পরিষৎকে নিঃশংসয়িত কণ্ঠে অভিনন্দিত করিবার দিন আসিল। এই দিন পূর্ণত্তর প্রাণশক্তি বহন করিয়া বৎসরে বৎসরে প্রত্যাবর্তন করুক এই কামনা করি।

শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। বাংলা ভাষার বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, অন্যান্য ভাষায় রচিত গ্রন্থের অনুবাদ, দুর্লভ বাংলা রচনা সংরক্ষণ, গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই পরিষদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

১৮৯৩ সালের ২৩ জুলাই এল. লিউটার্ড ও ক্ষেত্রপাল চক্রবর্তী'র উদ্যোগে বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার স্থাপিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি ও প্রসার। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন বিনয়কৃষ্ণ দেব। প্রথমদিকে একাডেমির সভার বিবরণ, মুখপত্র শুধু ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হতো। পরে এই ব্যাপারে কোনো কোনো সদস্য আপত্তি প্রকাশ করলে উমেশচন্দ্র বটব্যালের প্রস্তাবানুসারে একাডেমির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ করা হয় ১৩০১ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ(এপ্রিল, ১৮৯৪)। এর যাত্রা শুরু হয় কলকাতার শোভাবাজারে বিনয়কৃষ্ণ দেবের বাসভবনে।[১] প্রথম সভাপতি হন রমেশচন্দ্র দত্ত। এরপর বহু মনিষী এই পদ অলঙ্কৃত করেন। তারা হলেন - চন্দ্রনাথ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সহকারী সভাপতি : বঙ্গাব্দ - ১৩০১-০৩, ১৩০৮,১৩১২-১৬,১৩২৪; বিশিষ্ট সদস্য ১৩১৬) প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত