প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের হারাল টাইগাররা
প্রকাশ: ৩ মার্চ ২০২২, ১৮:৪১ | আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ২০:১৬
টি-টোয়েন্টিতে টানা ৮ ম্যাচে কোনো জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। অন্যদিকে আফগানিস্তান যে টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত দল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিঝড়ে সব হিসাবনিকাশ উল্টে গেল। আর তাতে সফরকারীদের উড়িয়ে দিয়ে জয়ে ফিরলো টাইগাররা।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে ৬১ রানে জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। জবাবে ৯৪ রান তুলতেই সব উইকেট হারান নবি-রশিদরা। এই জয়ে ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আফগানরা। বল হাতে ঘূর্ণিজাদু দেখিয়ে একে একে ৪ সফরকারী ব্যাটারকে তুলে নেন নাসুম। নিজের প্রথম ওভারেই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে (০) বিদায় করেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তার শিকার হন হজরতল্লাহ জাজাই (৬) ও দারউইশ রসুলি (২)। এই তিনজনকে মাত্র ২ রান খরচেই বিদায় করেন নাসুম।
এরপর এই বাঁহাতি স্পিনার নিজের তৃতীয় ওভারে আরও ৫ রান খরচ করে তুলে নেন চতুর্থ উইকেট। ওভারের তৃতীয় বলে আফগান ব্যাটার করিম জানাত মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। অবশ্য আরও এক উইকেট পেয়েছিলেন নাসুম। পরের বলেই লেগ বিফোরের আবেদন করলে মোহাম্মদ নবিকে আউট দেন আম্পায়ার, কিন্তু রিভিও নিয়ে বেঁচে যান আফগান অধিনায়ক। রিভিওতে দেখা যায়, বল তার ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগেছিল। নাসুমের ঘূর্ণিঝড়ে আফগানরা মাত্র ৮ রান তুলতেই হারায় ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেট হারানোর সময় তাদের সংগ্রহ ছিল ২০ রান।
নাসুমের পর আফগান শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। ইনিংসের ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে নবিকে (১৬) আফিফের ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন বাঁহাতি স্পিনার। এটি সাদা বলে সাকিবের ৪০০তম উইকেট। এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে মিডল অর্ডার ব্যাটার নজিবুল্লাহ জাদরানকে (২৭) ফেরান সাকিব। পরের ওভারে রশিদ খানকে ফেরান শরিফুল। এরপর মোস্তাফিজের শিকার হন আরেক সেট ব্যাটার ওমরজাই (২০)। ১৮ত্ম ওভারে বাকি ২ উইকেট তুলে নিয়ে আফগানদের ইনিংস গুঁটিয়ে দেন শরিফুল।
বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন নাসুম। সাকিব ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন। আর শরিফুল ৩টি ও মোস্তাফিজ বাকি ১ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়ে টাইগারদের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে মুনিম শাহরিয়ারের। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় ইয়াসির আলী রাব্বিরও।
ব্যাটিংয়ের শুরুতে আফগান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে নড়বড়ে শুরু করেন নাঈম শেখ। তবে অন্যপ্রান্তে রান তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান মুনিম। কিন্তু দলকে ১০ রানে রেখে ফারুকির বলেই লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফেরেন নাঈম। ৫ বল খেলে ২ রান করেছেন এই ওপেনার। এরপর মুনিমও বেশিদূর যেতে পারেননি। আফগান স্পিনার রশিদ খানের বলে লেগ বিফোর হওয়ার আগে অভিষেক ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ১৭ রান। যদিও তিনি রিভিও নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
দলীয় ২৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সাকিবের উইকেটও দ্রুতই হারায় বাংলাদেশ। ৬ বলের মোকাবিলায় ৫ রান করেই আফগান স্পিনার কায়েস আহমেদের বলে মুজিব উর রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন দেশ সেরা ওপেনার। তবে অন্যপ্রান্তে তখন সেট হয়ে দারুণ কিছু স্ট্রোক খেলতে শুরু করেছেন লিটন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। রিয়াদও নিজের মুখোমুখি চতুর্থ বলে হাঁকান ছক্কা। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। টাইগার অধিনায়ক ৭ বলে ১০ রান করে আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলে ভাঙে ৩৭ রানের জুটি।
দলীয় ৮০ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে লিটন অটল থেকে ছুটতে থাকেন ফিফটির দিকে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ফর্ম টি-টোয়েন্টিতেও টেনে আনেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও আফগানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিতে ৩৪ বল খেলেন তিনি; চার হাঁকান ৩টি, ছক্কা ২টি। ১৭তম ওভারে ফারুকির স্লোয়ারে শর্ট ফাইন লেগে ওমরজাইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে লিটনের ইনিংস থামে ব্যক্তিগত ৬০ রানে। ৪৪ বল স্থায়ী ইনিংসে তিনি হাঁকান আরও এক বাউন্ডারি।
লিটনের সঙ্গে ৩৮ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েছিলেন আফিফ হোসেন। কিন্তু জুটি ভাঙার পরের ওভারেই ওমরজাইয়ের বলে কভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার (২৫)। ২৪ বল স্থায়ী ইনিংসটি ২টি চারে সাজানো। এরপর আরেক অভিষিক্ত রাব্বির শুরুটাও ভালো হয়নি। ইনিংসের শেষ ওভারে রশিদ খানের দারুণ থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮ রান। একই ওভারের পঞ্চম বলে রশিদের থ্রোয়েই রান আউট হন মেহেদি (৫)। শেষ বল খেলতে আসা শরীফুল বাউন্ডারি হাঁকালে আফগানদের সামনে ১৫৬ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ।
বল হাতে আফগানিস্তানের ফারুকি ও ওমরাজাই ২টি করে এবং রশিদ ও কায়েস ১টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন নাসুম আহমেদ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত