পলাতক তারেক-জোবায়দা আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৪ |  আপডেট  : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৩

ফাইল ছবি : তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দিন ধার্য রেখেছেন ঢাকার একটি আদালত। একই বিষয়ে মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

জানা গেছে, জ্ঞাত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে এই তিন জনের বিরুদ্ধে দাখিল করা হয় অভিযোগপত্র।

তবে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। তবে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল [আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন] করেন জোবায়দা। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন।

এদিকে গত ২৯ মার্চ এই মামলায় পলাতক তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে আবেদন করেন তাদের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। দুই জনের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শুনানিতে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এ আইনজীবী। তবে একইদিন পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন দুদকের কৌঁসুলি।

এ মামলায় ২০২২ সালের ১ নভেম্বর তারেক রহমান ও জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ফলে বর্তমানে তারা আইনের দৃষ্টিতে পলাতক রয়েছেন। এই পলাতক অবস্থায় তারা নিজেদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, তারা দুজন পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগের কোনও সুযোগ নেই। আমাদের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এ পর্যন্ত কোর্টে হাজির না হয়ে আইনি লড়াই করার কোনও নজিরও নেই। একই কারণে হাইকোর্ট তাদের জামিন আবেদনও শোনেননি।

নজির তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এর আগে করোনাকালীন সময়ে দেশের বাইরে থেকে দুই জন [সিকদার গ্রুপের দুই ভাই রণ হক শিকদার ও দিপু হক শিকদার] আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। তখন আদালত কিন্তু সে দুজনের আবেদন খারিজই শুধু করেননি, তাদের জরিমানাও করেছিলেন। এছাড়া একজন আইনজীবী এরকম একটি [আত্মসমর্পন না করে] মামলা করেছিলেন। একপর্যায়ে হাইকোর্ট ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন। তাই পলাতক থেকে মামলা আইনি লড়াই করার সুযোগ নেই।

তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশের ইতিহাসে এমনভাবে [পলাতকের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের] আবেদন করার নিয়ম নেই। তবে এ বিষয়ে আদেশের জন্য অপেক্ষা করবো। আশা করছি পক্ষে আদেশ পাবো।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক-জোবায়দা তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন না। কেউই এমনটা পারেন না। এরকম ডজন ডজন নজির আমাদের রয়েছে। তবে তাদের দুজনের যে আবেদন, তা সময়ক্ষেপণ করার জন্য। এ বিষয়ে আদালতের আদেশ সুস্পষ্ট।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত