পঞ্চগড়ে মোবাইল চুরির অপবাদে নারীকে শারীরিক নির্যাতন
![](https://gramnagarbarta.com/assets/images/reporter.png)
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১২:২৭ | আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:৫৭
![](https://gramnagarbarta.com/storage/photos/1/663f0fd601c62.jpg)
পঞ্চগড়ে মোবাইল চুরির অভিযোগে এক নারীকে রশি দিয়ে বেঁেধ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগ ( ফেসবুকে) মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। তার পরিবার অভিযোগ করে তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্র ধরে ধরে জানা যায় বৃহস্পতিবার সকালে জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের মনিরামজোত এলাকায় অবস্থিত জেমজুট মিল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায় একটি ভ্যান গাড়িতে জোর করে এক নারীকে তুলে রশি দিয়ে বাঁধছেন এই ব্যক্তি। তাকে সহযোগিতা করছেন আরেক ব্যক্তি। এক দল নারী তার সাথে তর্ক করছেন। উৎসুক জনতা এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন। ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে ওই নারী জেমজুট মিল বাজারে আসলে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ঝলঝলি এলাকার আব্দুল জব্বার একদল নারীসহ এসে তাকে মারধর করে ভ্যানে তুলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যান ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে। সেখানেও নিয়ে জব্বারসহ গ্রামের কিছু লোক তাকে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় আরও মারধর করে। এ সময় যেই তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায় তাকেই মারধর করে তারা। ওই নারীর পরিবারের সব সদস্যকেই মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারটির। এক পর্যায়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুর নির্দেশে ওই নারীকে কান ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। মারধরের শিকার ওই নারী বর্তমানে মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমি জব্বারদের বাড়িতে তার মায়ের সাথে কয়েকদিন ধরে আছি। কথা বলার জন্য ওর মা আমাকে মোবাইলটি দেয়। আমি সেটি নিয়ে কথা বলতে বলতে জেমজুট বাজারে আসি। ওরা কাছের মানুষ। ফোন করলে আমি বলি ফোনটি একটু পর দিয়ে আসছি। এর মধ্যেই মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর জেমজুটে এসে মোবাইল চুরির অপবাধ দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে জব্বার। পরে আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়ি। সেখানেও আমাকে মারধর করে।
ভুক্তভোগী নারীর বোন বলেন, আমার বোনটি মানসিকভাবে একটু অসুস্থ। সে হুটহাট করে বাড়ি থেকে চলে যায়। তার দুই সন্তান রয়েছে। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে যারা তাকে আশ্রয় দেয় তারাই আবার তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলছে। মোবাইল চুরির অপবাধ দিয়ে আমার বোনকে জব্বার ও তার সহযোগি নারী পুরুষরা জেমজুট এলাকায় মারধর করে। পরে আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যানের বাড়িতেও গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে। আমরা যেই তাকে বাঁচাতে গেছি তাকেই মারধর করেছে তারা। শেষে সাবেক চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমার বোনকে কান ধরে উঠবস করানো হয়। আমার বাবা বলেছিল ও দোষ করলে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু তারা তা না করে অমানবিক নির্যাতন করেছে আমার বোনকে। আমরা এই নির্যাতনের ন্যায্য বিচার চাই।
জেমজুট মিল এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বলেন, আমি দেখতে পাই এক নারীকে ৮ থেকে ১০ জন নারী ও কয়েকজন পুরুষ হঠাৎ মারধর শুরু করে। তারা জানায় মোবাইল চুরি করায় তারা তাকে ধরতে এসেছে। পরে তারা রশি দিয়ে বেঁধে তাকে ভ্যানে করে নিয়ে যায়। বিষয়টি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। তাই মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করি। এ বিষয়ে আব্দুল জব্বারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। বংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই মেয়ে দেহ ব্যবসায়ী। সে মোবাইল চুরি, টাকা চুরিসহ দেহ ব্যবসা করছে। স্থানীয়রা তাকে ধরে এনেছিল। পরে সে ভালো হয়ে যাওয়ার আশ^াস দিলে এবং মাপ চাইলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তার খোঁজ খবর নিচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবার আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা সকল ধরনের সহযোগিতা করবো।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত