নেতাকর্মীদের দখলে থাকা হোজির নদীর বাঁধ অপসারণ শুরু

  স্টাফ রিপোটার, বাগেরহাট

প্রকাশ: ৫ জুলাই ২০২২, ০৯:৪৬ |  আপডেট  : ১৪ মে ২০২৪, ১০:০৮

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দখলে থাকা বাগেরহাটের হোজির নদীর অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ শুরু হয়েছে। সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলামের নেতৃত্বে হোজির ব্রীজের নিচের বাঁধ অপসারণ করা হয়। এসময়, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদাউস আনছারি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি, জেলা পুলিশের সদস্য, ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে এই নদীর সব বাঁধ ও নেটপাটা অপসারণ করা হবে। দীর্ঘদিন পরে নদীটি অবমুক্ত হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই নদীটিতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাছ চাষ করতেন। আমরা এই খাল থেকে একটা মাছও ধরে খেতে পারতাম না। গ্রামবাসীর প্রয়োজনে এই খালে পানি ওঠানো নামানো হত না। এই নদীর পানি ব্যবহার করা হত মাছচাষীদের সুবিধার্থে। সরকারিভাবে নদীটির বাঁধ অপসারণ হওয়ায় আমরা খুবই খুশি হয়েছি।

মোঃ আব্বাস নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, নদীর বাঁধ কাটায় আমাদের খুব ভাল হয়েছে। এখন নদী থেকে মাছ ধরতে পারব, নদীতে গোসল করতে পারব, নদীতে নৌকা চালাতে পারব। নিজেদের প্রয়োজনমত এই নদী ব্যবহার করতে পারব।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ আরজু বলেন, সরকারি নদী প্রশাসন অবৈধ দখলমুক্ত করেছে। এতে এলাকার মানুষের উপকার হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাঁচ বছর আগেও একবার এই নদী দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁধ কেটে দেওয়ার কিছুদিন পরে আবারও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু হয়, এটা দেখবে কে? পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে খনন কাজ শুরুর জন্য দেওয়া একাধি বাঁধ এখনও এই নদীতে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখেছি হোজির নদীতে মাটির বাঁধ, পাটা ও নেট দিয়ে মাছচাষসহ সব ধরণের অবৈধ কাজ হচ্ছিল। আমরা হোজির ব্রিজের নিচে দেওয়া বাঁধটি অপসারণ করেছি। এই নদীর অন্যান্য স্থানে যেসব বাঁধ, নেটপাটা রয়েছে, সেগুলোও অপসারণের কাজ চলছে। প্রয়োজনে আরও দুইএকদিন এই নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে কাজ করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে কেউ যদি এই খালে অবৈধ বাঁধ বো মাছ চাষ করতে চায় তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার হুশিয়ারী দেন উপজেলার শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ, ২০০৯ সাল থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নে অবস্থিত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হোজির নদীর ৬ কিলোমিটারে বাঁধ দিয়ে সমন্বিতভাবে মাছ চাষ করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী। ৩০ জুন থেকে ৩ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন গনমাধ্যমে হোজির নদী দখল নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরপরেই এই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে নামল প্রশাসন।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত