নানা বাঙালির নজরুল

  জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৩, ১১:৩৯ |  আপডেট  : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৫৫

কাজী নজরুল  ইসলাম বাঙালির হৃদয়বাসী। এক নিঃশ্বাসে এই কথা বলার মুহূর্তে ভাবতে হয়, কোন বাঙালির? কেননা তাঁর জন্মশতবর্ষপূর্তির চব্বিশ  বছর পরেও এই রকম মনে হয়, যে বাঙালির হৃদয়ে তিনি আসীন তার চেহারা সর্বদা এক রকম ছিল না, সম্ভবত এখনও নেই।

“মুক্তি” কবিতাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকহৃদয় প্লাবিত না-করে থাকলেও এর জন্যে দীর্ঘ সময় তাঁকে ব্যয় করতে হয়নি। তেরোশো ছয় থেকে ছাব্বিশ এই ছিল তাঁর অপেক্ষাকাল, তার পর মাত্র বাইশ বছর, এবং এই বাইশ বছর সময়কালেই বাঙালির হৃৎসাম্রাজ্যের যৌবরাজ্যে অভিষেক হয় তাঁর। অথচ আশ্চর্য, তার পরের ত্রিশ বছরে সে-কথা সর্বদা সেই বাঙালির মনে থাকে না এবং তার পরের অনধিক ত্রিশ বর্ষে যদিও আবার ফিরে আসেন তিনি কিন্তু এক-ই মানুষের ঘরে নয়, এক চেহারার বাঙালির ঘরেতে তো নয়ই। এই সব কথা স্পষ্ট করা যাক। 

এক জীবনে কি কেউ বারবার ফিরে আসতে পারেন? নজরুল ইসলাম কিন্তু পেরেছিলেন। এই জীবনে ফিরে এসেছিলেন অন্তত দুবার। খুব বেশি খুঁটিয়ে দেখলে  বোধ হয় বলা যায়, তিনবার। আঠারশো নিরানব্বই থেকে প্রবাহিত তাঁর সাতাত্তর বছরের জীবনকে এমন স্পষ্ট তিনটি অংশে বিচ্ছিন্ন করা যায় যে , মনে হবে এক-একটি জীবনাংশের দাবিদার যেন ভিন্ন ভিন্ন মানুষ। এমনকি মৃত্যুপরবর্তী এই পঁয়তাল্লিশ বছরেও যে-নজরুল চলাচল করেন বাঙালির ঘরে তিনিও ভিন্ন একজন, যাওয়া-আসা তাঁর ভিন্ন বাঙালির ঘরেই।

জন্মপরবতী বিয়াল্লিশ বছরকে ধরা যায় তাঁর প্রথম জীবন। শৈশব -বাল্যপরবর্তিকালে যেমন ঘটে তেমনি ঘটেছিল তাঁর জীবনেও- শিক্ষাগ্রহণ, কর্মজীবন, গা্র্হস্থ্য জীবন- মোটা দাগেই এসব চিহ্নিত করা যায়। যদিও তাঁর জীবনধারণের পদ্ধতি, শিল্পসৃষ্টির অনন্য প্রক্রিয়া , কি গা্র্হস্থ্য জীবনের অচিরাচরিত উদাহরণ এসব ছোট দাগের টানে ধরা পড়ার মতো নয়।  তবুও এটুকুই ছিল তাঁর জীবন, সামাজিক মানুষের জীবন। তাঁর প্রথম জীবন। জগৎসভায় সকলের সঙ্গে বসে কাটানো হাসি-কান্নার জীবন। শিল্পসৃষ্টির কাল। সাফল্য, সমাদর, স্বীকৃতি যেমন জুটেছিল এই সময়ে, তেমনি জুটেছিল অপরের বিদ্বেষ, বিদ্রুপ ও হিংসার হলাহল। ঐ বিয়াল্লিশ বছরের জীবনে এত কিছু ঘটেছিল বলেই হয়তো পরবর্তী ত্রিশ বছরের জীবনে পূর্ব জীবন আর কোনো ছায়া ফেলেনি।

ঊনিশশো বিয়াল্লিশ থেকে ঊনিশশো বাহাত্তরকালে যে সৃষ্টিহীন অসুস্থ জীবন তাঁর তা সর্বাংশে ভিন্ন এক মানুষের পরিচয়ে চিহ্নিত। অজ্ঞাত তিনি আর নন নিঃসন্দেহে কিন্তু সে কথা কার-ও মনে থাকে না, এমন-ই অবহেলিত। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষ, গুণমুগ্ধ জন ছাড়া কাছে দাঁড়ায় না কেউ-ই। অন্ধকারে নির্বাসিত আলোকাভিসারী কবির  আর-ও গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করার সময় এটি। ঐ সময়ে  কোন কবিকে কেউ চেনে না। 

স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশে  ঘটেছিল তাঁর আরেক জীবনে উত্তরণ। ফিরে  এসেছিলেন যেন আবার জগৎসভায়। তাঁর এই তৃতীয় জীবনে ঘটে অনেক কিছুই, নির্মিত হয় এমন এক মানুষ যে ঐ সময়ে বোধোদয়  হলে ত্রিশ বৎসর পূর্বের নিজেকে আর চিনতে পারত না। এই তাঁর তিন জীবন। খুব অনায়াসেই ভিন্ন ভিন্ন করে চিনে নেওয়া যায়। আর অনায়াসেই শনাক্ত করা যায় ঐ তিন জীবনে তাঁর চারপাশে ছিল যারা --তাদের। তাঁর জগতের, দেশের, সমাজের মানুষদের। কবি কাজী নজরুল ইসলামের তিন জীবনের তিন আদলের মতোই বদলে যায় ঐ বাঙালির চেহারাও।

আর মৃত্যুপরবর্তীকালে? পেছনে ফেলে আসা শেষ এই পঁয়তাল্লিশ বছরে? আছেন কি নজরুল চিহ্নিত তাঁর পূর্ব কোনো পরিচয়ে? আছেন কি স্থিত পূর্ববর্তী কোনো বাঙালির হৃদয়াসনে অবিকল? চার বাঙালির নজরুল? সম্ভবত নয়।

সৃষ্টিসুখী নজরুল এক বাঙালির নয়নমণি ছিলেন। অসূয়াপরবশ, বিদ্বেষী, সংকীর্ণমনা, ধর্মচেতা, কি সম্প্রদায়ভেদবুদ্ধিতে আচ্ছন্ন যারা তাদের কথা মনে রেখেও একথা বলা যায়। এক দল বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে একবার কপর্দকবিহীন নজরুল শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ এবং সেখান থেকে স্টিমারে ঢাকা এসেছিলেন কেবল তাঁর পরিচিতির সুবাদেই। টিকিটের বদলে হারমনিয়ামের সঙ্গে  মেলানো তাঁর গলায় দু’টি গান-ই রেলকর্মচারীর জন্য যথেষ্ট ছিল। সমাজের সর্বত্র তাঁর যাতায়াতের কথা জানা সকলের-ই । মোহনলাল গান্ধী যেমন্ন তাঁর “ঘোর ঘোর ঘোররে আমার সাধের চড়কা ঘোর” শুনে হেসে কুটি কুটি হয়েছিলেন তেমনি  গুণমুগ্ধের আসরে দূরে বসে থাকা নজরুলকে কাছে ডেকে এনে বসিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। 

মূলত তাঁর রাজনৈতিক রচনা, তাঁর ব্রিটিশ বিরোধিতা বৃহত্তর জনসমাজে তাঁকে পরিচিত করলেও, তাঁর কবিখ্যাতি, কি সুরসিন্ধুর পরিচয়ও এমন কিছু কম ছিল না।  বেতার ও চলচ্চিত্রের জন্য অবিরল ধারায় রচিত ও সুরারোপিত তাঁর গানের খ্যাতি রসিক সমাজের বাইরেও ছড়িয়েছিল অনেক দূর- এসব  সহজপ্রাপ্য তথ্য।  তাঁর কন্ঠস্বর, বেতারে কিংবা নানা জায়গায় ছিল সকলের পরিচিত, এ-ও জানা। “উর্ধ্বগগনে বাজে মাদল”-এর সঙ্গে তালে তালে পা ফেলত সহস্র সহস্র কিশোরকিশোরী সারা বাংলায়, সে ঐ চল্লিশের কালেই।

কাজী নজরুলের দ্বিতীয় জীবনের সঙ্গে যে বাঙালির জীবন জড়ানো ছিল তার চেহারা বড় মলিন, ধূলিধূসর।  প্রিয় কবির তৎকালীন চলাচলের খবর তারা খুব বেশি রাখেনি।  বিয়াল্লিশের পরে নানা চিকিৎসকের সান্নিধ্যে কি চিকিৎসালয়ের বিছানায় যে কবির সময় কাটে বেশি, লেখার টেবিলে নয়, দুটি শব্দকে পাশাপাশি বিন্যস্ত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছিলেন ক্রমে যে কবি তাঁর খবর অন্যেরা  রাখবেই বা কেন? 

সুফী জুলফিকার হায়দার নজরুলের জীবনের এই পর্বের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। নজরুলের চিকিৎসার ব্যবস্থা কি সংসারের খরচ সংগ্রহের জন্য তৎকালীন বাংলার প্রগতিশীল প্রায় সকলের সঙ্গেই দেখা করেছেন তিনি। শেরে  বাংলা ফজলুল হক অথবা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, সকলের সঙ্গেই। ফজলুল হক শ্যামা প্রসাদ মুখার্জিকে বলেছিলেন নজরুলের ব্যবস্থা করার জন্য। শ্যামাপ্রসাদ জুলফিকার হায়দারের সঙ্গে কবির বাসায় তাঁকে দেখতেও যান। কবির মধুপুরে কিছুদিন থাকার ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন। অপরের করুণাপ্রার্থী-- এই ছিল কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় জীবনের প্রারম্ভ- বাঙালি সমাজেই।  বিয়াল্লিশপরবর্তী বাঙালি সমাজেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে “জগত্তারিণী” পুরস্কার দেয় ১৯৪৫-এ। ভারত সরকার তাঁকে “পদ্মভূষণ” উপাধি দেয় ১৯৬০-এ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৯ -এ তাঁকে দেয় ডি-লিট উপাধি। কবির বোধক্ষমতা রহিত হবার পরের ঘটনা সে-সব।

সুফী জুলফিকার হায়দার

ঊনিশশো বাহাত্তরে দীর্ঘ বত্রিশ বৎসর পরে ঢাকায় আসেন নজরুল।  এবং বলা যায়, তখন-ই শুরু হয়  তাঁর তৃতীয় জীবন- আর এক বাঙালির মেলায়। সদ্যপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবির স্বাচ্ছন্দের যথাসাধ্য ব্যবস্থা করেন। নজরল দর্শনার্থীর অবিরল স্রোত দেখা যায়  ধানমন্ডিতে। ঢাকা বিশ্ববি্দ্যালয় থেকে তাঁকে ডি-লিট উপাধি দেওয়া হয়  ১৯৭৩  -এ। একুশের পদক-লাভ করেন তিনি ১৯৭৫-এ। অভিযোগ করার কিছু থাকে না।  এক-ই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী সরকারের আনুকূল্যে নজরুল যেন পুনরায় প্রতিষ্ঠা পান।  প্রতিষ্ঠিত হয় নজরুল একাডেমি। নজরুলচর্চায় উৎসাহ দেখা যায়। শুরু হয় নজরুল  সংগীত প্রতিযোগিতা-- রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই।    তাঁর গ্রাম চুরুলিয়াতে সাংবাৎসরিক নজরুল-উৎসবের আয়োজন করা হয়।  মনে হয় তিনি প্রকৃত-ই আবার ফিরলেন সব বাঙালির ঘরেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কাজী নজ্রুল ইসলাম

আসলেই কি তাই? সৃষ্টিক্ষমতা শেষ হও্য়ার এতোকাল পরে, যেন শারীরিক মৃত্যুর-ও পঁয়তাল্লিশ বছর পরে, এই যে নজরুল মনে হয় বাঙালির জীবনে আবার আসন পেতেছেন, তাকি যথার্থ?  কিছু কিছু ব্যাপার স্পষ্ট দেখা যায়। যেমন নজরুল ইন্সটিটিউট কি নজরুল একাডেমি প্রতিষ্ঠা, তাঁর জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন, নানাস্থানে নজরুল সম্মেলন, এমন কি প্রবাসেও, -তাতে মনে হয়, তিনি অবশেষে তাঁর যোগ্য স্থানটি পেয়েছেন। যদিও নজরুল সংগীতচর্চার কিছু প্রসার ঘটা ছাড়া তাঁর রচনাবলি পাঠে বা প্রকাশে প্রচন্ড আগ্রহ দেখা যায় না। কয়েক সহস্র কবিতা ও গানের বাইরে তিনটি গ্রন্থ্বে সংকলিত আঠারোটি গল্প, তিনটি উপন্যাস, তিনটি নাটক, এবং শিশু সাহিত্য ও প্রবন্ধাদি মিলিয়ে আর-ও বারোটি গ্রন্থে আছে তাঁর – আজকের বাঙালির কয়জন সেইসব গ্রন্থ পাঠ করে? নজরুল কাব্যানুরাগীর সংখ্যা অবশ্য নগন্য নয় কিন্তু তারা “সঞ্চিতা”র বাইরে খুব একটা খোঁজাখুঁজি করে না নজরুল কাব্যপিপাসা তৃপ্ত করার উদ্দেশ্যে। তাই “ফণিমনসা”, “সিন্ধুহিন্দোল,  “চক্রবাক” ইত্যাকার গ্রন্থের প্রচ্ছদটিও সকলের চোখে দেখা আছে বলে মনে করার কারণ নেই। নজরুল ইসলামের গান একটি জনপ্রিয় প্রসঙ্গ অবশ্য-ই। তবুও প্রায় আড়াই হাজার গানের মধ্যে মাত্র গোনাগুনতি কটি গান-ই , সম্ভবত কয়েক শতও নয়, বারবার শোনেন নজরুলসংগী্তরসিক।  আলোচিত-ও হয় সেইসব গান। কিন্তু সেই আলোচনায় আগ্রহীর সংখ্যা অগণিত নয়। আবার সম্পূর্ণ অসাংগীতিক কারণে অনেক নজরুল গীতি বর্জিত হয় কিছু শ্রোতা কর্তৃক। 

নজরুল ইন্সটিটিউট

অথচ এক সময় ছিল, নজরুল শিক্ষিত বাঙালির আসরে সর্বদা আলোচিত হতেন।  যে কবির বারোটি গ্রন্থ সরকার বাজেয়াপ্ত করে, যে সম্পাদকের পত্রিকার ছাপাখানায় পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দেয় কি কবিতা লেখার দায়ে যে কবিকে কারারুদ্ধ হতে হয় তিনি যে সমকালীন জনমানসে দেদীপ্যমান থাকবেন, এ সামান্য কথা। কিন্তু জনচিত্তে তাঁর ঐ অবস্থান ঐ সব কারণেই চিরকালীন হবে এমন ভাবা সংগত নয়। সমালোচকরা বলেন, সমকালীন যে-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা নজরুলের সময়ে বৃটিশ বিরোধিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তা পরবর্তীকালে ব্যবহারযোগ্য নয়। বাংলাদেশের সৃষ্টিকালে নজরুলের বিদ্রোহী গান কিয়ৎপরিমানে জনচিত্তে প্রেরণা সঞ্চার করলেও কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি- কি আওয়ামী-বাজাদল-জাপার ডামাডোলে বর্তমান সময়ে সকলকে সমভাবে উদ্দীপিত করে না।

এই সময়ে, ধরা যাক গত পঁচিশ-ত্রিশ বছরে, নজরুলচর্চার-স্রোতটি মূলত প্রবাহিত এক ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নজরুল ইসলামের ব্যবহারকে কেন্দ্র করেই। এখানে তাঁর বিদ্রোহের বাণী নয়, কি প্রিয়ার খোঁপায় তারার ফুল নয়, এমন কি ফোলা পাল দোলা তরণীর কান্ডারিও নয়, এসব কিছুই এখানে কাজে লাগে না , এখানে “কাজী নজরুল ইসলাম” এই নামটিই কেবল মুখ্য থাকে এবং এই নামধারী  মনুষ্য শরীরটিও। তাঁকে ঘিরে সৃষ্টি হয় কিছু অলিক তত্ত্ব, উদ্দেশ্যমূলক তথ্য ও রাজনৈতিক প্রয়োজন।  প্রকৃত কাজী নজরুল ইসলাম--কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকার, সুরস্রষ্টা, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ, অভিনেতা, গায়ক, প্রমীলার স্বামী, কৃষ্ণমোহাম্মদের পিতা কাজী নজরুল ইসলাম সেখানে যেন কেউ নন।

এখানে পশ্চিমবঙ্গের কথাও তোলা যাক। নজরুলের মৃত্যুর দু’-দশক পূর্বের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে পশ্চিমবঙ্গে নজরুলচর্চার কোনো উল্লেখযোগ্য নিদর্শন পাওয়া যায় না। বামপন্থি সরকারের উদ্যোগেই তাঁর প্রসার ঘটেছিল সেখানে। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে নজরুলবিদ্বেষ প্রচারের  চেষ্টা  আবারো যে হবে না সে দেশে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। বেশ  কিছুকাল আগে নজরুল জন্মজয়ন্তী পালনে বাধা দেওয়া কি নজরুল একাডেমির পরিচালককে নির্যাতন করার যে সংবাদ পাওয়া গিয়েছিল, তাতে মনে হয় আবারও নজরুলকে সে  দেশে সাম্প্রদায়িকতার নিরিখেই বিচার করার চেষ্টা চলছে। অন্তত কিছু লোকের মধ্যে তো বটেই। আর এক বাঙালি সমাজে। তাহলে কীভাবে আমরা বাঙালি সমাজে তাঁর পুনর্জীবন লাভের ঘটনাবলিকে  বিচার করি।

মহৎ স্রষ্টা --- লেখক, কবি, শিল্পী, বাঁচেন তাঁর রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারের মধ্যে।  জনচিত্তে তাঁর স্থায়িত্ব নির্ণয়ের অনপনেয় যে চিহ্নটি তিনি রেখে যান সমাজচরিত্রে, তার-ই বিচারে।  নজরুল-ও  তেমন চিহ্ন রেখে গেছেন।  শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে কিন্তু তার-ও চেয়ে আর-ও বড়ো কিছু চিহ্ন রেখে গেছেন তিনি। যা স্পষ্ট দেখা যায় তাঁর জীবনের দিকে তাকালে, তাঁর শিল্প কর্মের দিকেও। সেটি হচ্ছে বাঙালি সমাজে ধর্মবুভেদদ্ধিহীন এক মিলিত, সমন্বিত সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতির পরিচয়ে নিজেদের শনাক্ত করতে পারলে কত সহজে দূর হতো বাঙালি জীবনের এক মহা অভিশাপ। দুঃখ এই সেই চিহ্নের দিগ নির্নয়ে নিয়ত ভুল করি।

জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত