নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ আরও এক বছর পিছিয়ে গেল
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ২১:১০ | আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮
প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ আরও এক বছর পিছিয়ে গেল। এর ফলে আগামী বছরও নতুন শিক্ষাক্রমে বই পাবে না শিক্ষার্থীরা। এখন নতুন সিদ্ধান্ত হলো, ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের কাজ হবে। এরপর ২০২৩ সালে গিয়ে এই দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়া হবে।
অন্যদিকে প্রাথমিকে আগামী বছর কেবল প্রথম শ্রেণিতে ১০০টি প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলক কাজ হবে এবং পরের বছর এই শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া হবে। কিন্তু অন্যান্য শ্রেণিতে কী হবে, সেটি তারা আগামী বছর গিয়ে ঠিক করবে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনসহ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এই তথ্য জানান।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আগামী বছর পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমে কার্যক্রম চালানোর আলোচনা হয়েছে। এখন কার্যবিবরণী লেখা হলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
প্রথমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছেল চলতি বছর থেকে কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে বই পাবে। কিন্তু করোনার কারণে তা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি; মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই পাওয়ার কথা ছিল। আর ২০২৩ সালে অষ্টম শ্রেণি ও ২০২৪ সালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়ার কথা। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের বই দেওয়ার কথা।
শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তনের হাঁকডাক দিয়ে এই নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের এই কাজ শুরু করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কথা ছিল, এ মাসে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে তার আলোকে জুনের মধ্যে নতুন বই লেখার কাজ শেষ করা হবে। এরপর বই ছাপিয়ে আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই দেওয়া হবে। কিন্তু এপ্রিল মাস শেষ হতে চললেও এখনো শিক্ষাক্রমের রূপরেখাই অনুমোদন করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ গত নভেম্বরে রূপরেখাটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল এনসিটিবি। কিন্তু অনুমোদন না করে উল্টো কিছু দিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের বই ছাপতে এনসিটিবিকে নির্দেশ দেয়। এ রকম অবস্থায় আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যায়, যা আজকের সভায় বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো।
লকডাউনের কথা বলা হলেও অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং এনসিটিবির মাধ্যমিক ও প্রাথমিক অধিশাখার কর্মকর্তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য সমন্বিতভাবে শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ শুরু হলেও প্রাথমিকের প্রশাসন মনে করেছে, এতে তাদের মতামতকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কর্তৃত্বও থাকছে না। এখানে বাইরের কিছু লোকের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, যেভাবে শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখাটি তৈরি করা হয়েছে, তা বর্তমান বাস্তবতায় মাঠপর্যায়ে প্রাথমিকের জন্য বাস্তবায়ন করাও কঠিন। এগুলো নিয়ে প্রাথমিকের প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে না বললেও ভেতরে-ভেতরে নতুন শিক্ষাক্রমের বিপক্ষে কাজ করেছেন। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও কাজটি ঠিকভাবে সমন্বয় করতে পারেনি।
সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছিল। সাধারণত পাঁচ বছর পরপর শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত