নগরীর জলবদ্ধতা : আমাদের করণীয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২১, ১২:১৪ |  আপডেট  : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৪

কাজী আরিফ

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ একটি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। আমাদের গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বৃষ্টি হয় জুন থেকে অক্টোবর মাসে। এই ৩ মাস মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য নগরী পানিতে ডুবে যায়। নগরজীবন অচল হয়ে পড়ে। জলজটের সঙ্গে নগরীতে বাড়ে যানজটও।

 

করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষত নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি রয়েছে কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে। তার ওপর যদি নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, তাহলে একে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে?

 

প্রতিবছরই আমরা দেখি, বর্ষাকাল এলে জলাবদ্ধতা মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়, তা দূর করার জন্য প্রতিশ্রুতি মেলে; কিন্তু জলাবদ্ধতা আর দূর হয় না। বরং বছর বছর বাড়তে থাকে এর পরিধি ও স্থায়িত্ব। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন জাগে, নগরপিতারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কী করছেন? এ প্রেক্ষাপটে আরো প্রশ্ন জাগে, নগরবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন হবে? তবে প্রশ্ন জাগে না, প্রতিবছর জলাবদ্ধতার নিরসনের জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়ার পরও এর সুফলতা কেন পাচ্ছি না?

আমরা সকলেই এ জন্য সিটি করপোরেশনের অদক্ষতা, অবহেলা, অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দায়ী করি। কখনও কি ভেবে দেখছি, এই সমস্যার কারণ আমরা সাধারণ জনগণ এড়িয়ে যেতে পারিনা। এখন প্রশ্ন হলো, এ সমস্যা নিরসনে আমাদের কী করণীয়? এর আগে প্রথমে জানা দরকার, জলাবদ্ধতা কেন হয়?

আমাদের যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে সেখান দিয়েই সকল প্রকার পয়ঃনিষ্কাশন হয়। সে ড্রেনের ধারণ ক্ষমতা কত? সেই ড্রেনগুলো কি নিয়মিত পরিস্কার করা হয়? এক বাক্যে উত্তর হলো-না। কারণ শুধু স্থাপন করলেই হয় না, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি। অনেক সময় ময়লা জমে পুরো ড্রেনটাই আটকে থাকে, সেই ময়লা অপসারণের উদ্যোগ খুব একটা চোখে পড়ে না। এ জন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি আমরাও দায়ী। সবকিছু অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া সমীচীন নয়। বাসার ময়লা আবর্জনা আমরা কোথায় ফেলি? অধিকাংশ সময় দেখা যায় সেগুলোর স্থান হয় বাসার পাশের ড্রেনে অথবা রাস্তার পাশে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। নাগরিক সচেতনতা ছাড়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও স্বল্প বাজেটভুক্ত দেশে সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রতিদিন এই প্রচুর ময়লা পরিস্কার করা কষ্টসাধ্য। এখানে আমার, আপনার সবার একযোগে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করা দরকার।

অপরদিকে পলিথিন, প্লাস্টিক আজ আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২০০১ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু আজও আমরা তা ব্যবহার করছি। এ জন্য দায়ী কি সিটি করপোরেশন না আমরা নিজে? স্বাভাবিক বৃষ্টির সময় সকল ধরনের ময়লা ও কাদামাটি পানির সাথে মিশে ড্রেন ও নালায় জমাট হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ঘটে জলাবদ্ধতা। তাই আমাদের সকলের উচিত অন্যের দিকে তাকানোর আগে নিজেকে একবার আয়নায় দেখা। নিজ এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করা প্রয়োজন।

 

আমরা কথায় কথায় বিভিন্ন উন্নত দেশের উন্নত শহরগুলোর কথা বলে বেড়াই এবং বলি- সেসব শহরে কোনো জলাবদ্ধতা নেই। আমাদের জানা দরকার, সেসব দেশ ও শহরের মানুষজনও যথেষ্ট সচেতন।

সরকার হাজার চেষ্টা করেও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করতে পারবে না, যদি সাধারণ নাগরিকরা সচেতন না হয়। আমাদের ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনাই জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ- এ বোধটুকু নাগরিকদের মধ্যে থাকতে হবে; তাহলেই জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ সাফল্য পাবে এবং আমরা পাব জলাবদ্ধতামুক্ত সুন্দর শহর। আসুন আমরা সকলে মিলে এই সংকট থেকে উত্তরণে এগিয়ে আসি। ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলি, আমাদেরই আগামী প্রজন্মের জন্য।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত