গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে যেতে হতো না

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫১ |  আপডেট  : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:৫৮

নিজের দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, যদি তাদের খুঁটিতে জোর থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনসমর্থন ও জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তারা (বিএনপি) জনগণের কাছে যেত; বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াত না। এটাই হলো বাস্তবতা।যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিকেল চারটায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন করেন, বিএনপি প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কাছে যাচ্ছে; নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, নাকি বিদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়, নির্বাচনটা কে করে দিয়ে যাবে। বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। বিএনপির সৃষ্টি যেভাবে, একটি মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বিএনপির সৃষ্টি। তারপর নির্বাচনের যে প্রহসন, এটা তো তাদেরই সৃষ্টি। বরং আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ছবিসহ ভোটার তালিকা হচ্ছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হচ্ছে। মানুষ যেন তার ভোটটা দিতে পারে, সে পরিবেশ বা ভোট সম্পর্কে মানুষের যে সচেতনতা, এটা কিন্তু আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে।

জনসমর্থন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস—এই শক্তি বিএনপির নেই বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা—সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবেন তত ভালো। কিন্তু পারে না তো। কী করব।’

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে; নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে। এ দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, এটা আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই করে দিয়েছে।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়। হারার ভয়ে আসবে না। একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে; জিতিয়ে দিতে হবে; তবেই আসব। এটা তো হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা আগে করেছে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ওভাবেই করেছে। যাদের ওই অভ্যাস, তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে ভয় পায়।’

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল—সামনে নির্বাচন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবারও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন কি না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় তো নিমন্ত্রণ–আমন্ত্রণ একটু কমই হচ্ছে। প্রায়ই করোনা দেখা দিচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের এর মধ্যে আসতেই দিত না। এইবার আমি একটু জোর করেই বলেছি, কত দিন এভাবে আর দূরে থাকা যায়। করোনার কারণে এবার একটু চিন্তা করতে হবে। অনেকে আসবেও না, আসতেও পারবে না। এটা একটা সমস্যা।’

নির্বাচনে কে অংশ নেবে, কে নেবে না, সেটি যেকোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। এত দিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব, সবাই আসুক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, নির্বাচনে এসে দেখা গেল, তিন শ সিটে সাত শ নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার, আমাদের। জনগণের কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি বা ইমার্জেন্সি দিয়ে কখনো ক্ষমতায় আসেনি।’


অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের কি মানুষ ভোট দেবে? কখনো দিতে পারে না। সেই পোড়া ঘা তো এখনো সবার শুকায়নি। এখনো তারা কষ্ট পাচ্ছে। গ্রেনেড হামলায় যারা আহত বা এ দেশে যারা লুটপাট করে খেয়েছে, সে কথাগুলোও ভাবতে হবে—বলেন, শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা তো চাই–ই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক; কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না; আসেও নাই। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসছে।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত