দেখার কেউ নেই, কাউনিয়ায় ভিটামিন সমৃদ্ধ আঠিয়া কলা বিলুপ্তির পথে

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৮:৪৪ |  আপডেট  : ১৫ মার্চ ২০২৫, ২০:৪৪

বিগত সময়ে রংপুরের কাউনিয়ায় প্রতিটি গৃহন্থ বাড়িতে প্রচুর আঠিয়া কলা চাষ করতেন। অনেকেই রাস্তার ধারে এমনিতেই আঠিয়া কলা গাছ লাগিয়ে রাখতেন, চাহিদাও ছিল প্রচুর। কৃষি বিভাগের উদাসিনতায় ধিরে ধিরে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য আঠিয়া কলা বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে কোথাও কোথাও রাস্তার ধারে কিছু আঠিয়া কলা গাছ দেখা গেলেও গৃহস্থ বাড়ি গুলোতে তেমন একটা চোখে পরেনি। এক সময় কাউনিয়ায় উৎপাদিত আঠিয়া কলা বিখ্যাত ছিল। এই উপজেলার আঠিয়া কলা যেত দেশের বিভিন্ন জেলায়। অনেক ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ আঠিয়া কলা গ্রামের কৃষক পানতা ভাত, চিড়া বা মুড়ি দিয়ে মেখে খেয়ে মাঠে কাজে নেমে পরতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্যও হরাতে বসেছে। কাউনিয়ায় গ্রামগঞ্জে এখনো প্রচলিত রয়েছে, আঠিয়া কলা ও চিড়া মেখে খেলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ভাল হয়। রাজিব গ্রামের কৃষক মনসুর আলী জানান, আগের দিনে জমি চাষ করতে যাওয়ার আগে পানতা ভাত, চিড়া বা মুড়ি দিয়ে আঠিয়া কলা মেখে খেয়ে মাঠে যেতাম। এখন আর গরু মহিষের হালও নেই আটিয়া কলা দিয়ে পানতা ভাত বা চিড়া মুড়ি খায়াও নেই। খোপাতি গ্রামের গফুর আলী জানান, দেশি আঠিয়া কলা (বিচি কলা) এক সময়র জনপ্রিয় খাবার ছিল। আমি ছোট থেকে প্রতিদিন সকালে আঠিয়া কলা দিয়ে ভাত খেতাম। গ্রামে যদি কারো পাতলা পায়খানা হয় তাহলে আঠিয়া কলা আর চিড়া খেলে ভাল হয়ে যেত। বালিকা বিদ্যালয় মোড়ের ফলা ব্যবসায়ী কাদের জানান, আঠিয়া কলার চাষ না হওয়ায় এখন খুবই কম পাওয়া যায়। যদিও  কিছু কিছু গ্রামে আটিয়া কলা পাওয়া যায় তবে দাম অন্য কলার চেয়ে একটু বেশী। হলদীবাড়ি গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে দেশী এই কলা চষে উদ্ভুদ্ধ করলে বাঙ্গালী ঐতিহ্য যেমন টিকে থাকতো অন্য দিকে কৃষক লাভবান হতো। কলাগাছ রাস্তার ধার, পুকুর ও নদীর পাড় ভাঙ্গন রোধে ভুমিকা রাখে। কৃষি বিভাগ থেকে আঠিয়া কলা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে না। তাদের উদাসিনতায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য। ডাঃ লিয়াকত আলী জানান, একটি বড় মাপের আঠিয়া কলা খেলে ১০০ ক্যালরি বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলায় প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস থাকে, যা শরীরের স্বাস্থ্যকর টিসু গঠনে কাজ করে। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। আটিয়া কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করে। এ কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে। পটাসিয়াম মানুষের অবসাদ কে দুর করে। এ কলা বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং ডি এর একটি অসাধারণ উৎস। কলায় প্রচুর লৌহ থাকে। কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানিয়া আকতার জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে হাইব্রীড কলা চাষ শুরুর পর থেকে আঠিয়া কলা চাষ কমে গেছে। সাধারনত কলা বীজবিহীন ফল হলেও ব্যতিক্রমধর্মী এ কলায় প্রচুর বীজ থাকে। বিচি বেশি হওয়ায় কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে না। তবে গ্রামের বাড়ির আশে-পাশে এ কলার গাছ দেখা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে আটিয়া কলা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত