দুই ভাইয়ের এক স্ত্রী!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১৫:২৯ |  আপডেট  : ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৬

হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলায় এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হলো দুই ভাইয়ের। কয়েক শত বছরের প্রাচীন প্রথা মেনে একসঙ্গে দুই  ভাইকে বিয়ে করেন কুনহাট গ্রামের সুনিতা চৌহান নামের এই তরুণী।

এ যেন মহাভারতের পঞ্চ পান্ডব এবং দ্রৌপদীর সংসার। দ্রুপদের কন্যা রাজকুমারী দ্রৌপদীর স্বামী ছিলেন পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল এবং সহদেব । তবে হিমাচল প্রদেশের এই কন্যার স্বামী সিরমৌর জেলার শিলাই গ্রামের দুই ভাই প্রদীপ নেগি এবং কপিল নেগি। 

জুলাই মাসের ১২ থেকে ১৬ পর্যন্ত রীতিমতো অনুষ্ঠান করে তাদের ‘তিন জনের’ বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক মানুষ।

দুই পাত্রের মধ্যে প্রদীপ একজন সরকারি কর্মী এবং কপিল একজন প্রবাসি। এই বিয়ে নিয়ে তারা জানান, বিয়ের জন্য তাদের উপরে পারিবারিক চাপ ছিল না। এরপর তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবারকে জানালে পরিবারের সদস্যরা তাদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।

হিমাচল প্রদেশে একই সঙ্গে দু’টি বিয়ে একটি বহুল প্রচলিত প্রথা। ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় Polyandri। শব্দটি  গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে। গ্রিক ভাষায় ‘পলি’ শব্দের অর্থ অনেক এবং ‘aner’ শব্দটির অর্থ পুরুষ। 
এই প্রথা অনুসারে একজন নারী একাধিক পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন। স্থানীয় ভাবে এই প্রথা ‘দ্রৌপদী প্রথা’ বা ‘জোড়িদরন’ নামে পরিচিত। যদিও এই প্রথা ভারতীয় আইন অনুযায়ী স্বীকৃত নয়।

ভারতের  প্রললিত আইন অনুসারে একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক বিয়ে করতে পারেন না। এটি আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে হিমাচলের সিরমৌর জেলার কিছু কিছু গ্রামে হাট্টি উপজাতির মধ্যে এই প্রথা এখনও প্রচলিত। পাশাপাশি কিন্নর ও লাহুল-স্পিতিতেও এই প্রথা স্বীকৃত।

হিমাচলের হাট্টি উপজাতির বিশ্বাস এক নারীর দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হলে একজন স্বামীর মৃত্যু হলেও বিয়ে টিকে যাবে। পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য এবং সম্পদ পরিবারের মধ্যেই থাকবে।

হিমাচলের ট্রান্স-গিরি এলাকায় মোট ১৫৪টি গ্রাম রয়েছে। তার মধ্যে ১৪৭টি গ্রামেই হাট্টি উপজাতির বসবাস। গত ছয় বছরে এই গ্রামগুলোতে এমন ৫টি বিয়ে হয়েছে। 

কেন্দ্রীয় হাট্টি সমিতির সম্পাদক কুন্দন সিং শাস্ত্রী জানান, সেখানে শতাব্দীরও বেশি প্রাচীন এই প্রথা। সম্পত্তির ভাগাভাগি যাতে না করতে হয়, সেজন্যই এই প্রথার প্রচলন শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি দুই ভাই এক স্ত্রীকে বিয়ে করলে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সুসম্পর্ক থাকবে বলেও তাদের বিশ্বাস। তবে বর্তমানে শিক্ষার বিস্তার, শহুরে জীবনযাপন এবং চিন্তাভাবনার পরিবর্তনের কারণে ধীরে ধীরে এই প্রথা বিলুপ্তির পথে।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত