তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই, বরঞ্চ কমবে: বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী
প্রকাশ: ২ জুন ২০২২, ১৩:৪১ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩
আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী দেশে তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মন্ত্রী জানান, দাম কমবে। বৃহস্পতিবার (২ জুন) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এক্ষেত্রে তেলের দাম রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করা হবে কি না— জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আমরা রি-অ্যাসিস্ট করব। খুব শিগগিরই, ৫-৭ দিনের মধ্যে মে মাসের পুরো তথ্য নিয়ে আমরা রি-অ্যাসিস্ট করব।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেটা রিপোর্ট আছে, আজ দাম কমেছে। আজকের দামের প্রভাব দেশে পড়তে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস।
‘সুখবর যেটা— পাম অয়েলের দাম কমেছে এবং সয়াবিনের দাম কমার দিকে। ছয়-সাত দিনের মধ্যে যেসব সভা হবে সেটাতে অ্যাসিস্ট করে দেখে নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে। বাড়ার সম্ভাবনা নেই, আমার ধারণা। নতুন দাম অনুযায়ী দাম কমবে। পাম অয়েলে তো যথেষ্ট প্রভাব পড়বে মনে করি, সয়াবিনের দামও অতটা বাড়বে না’, বলেন তিনি।
চালের ইস্যুতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মূলত চাল কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য করব।
তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি খাদ্য মন্ত্রণালয় আটটি টিম করেছে। এসব টিম ইতোমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে, জানার জন্য এবং কতটুকু স্টক আছে, তা বের করার চেষ্টা করছে। যেকোনো কিছুর সুফল পেতে হলে সময় দিতে হয়। আশা করছি এ সপ্তাহের মধ্যে তারা আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে চালের অভাব নেই, যা দরকার তা কিন্তু আমাদের আছে। কোথাও-কোথাও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
টিপু মুনশী আরও বলেন, আরেকটা কথা সেদিন আলোচনা হয়েছিল। বড় গ্রুপগুলো, তারা চাল কিনে প্যাকেট করছে। এরপর তারা বিক্রি করছে বেশি দামে। এখানে একটি সিম্পল (সাধারণ) প্রশ্ন আমার রয়ে গেছে, আমি সেদিনও বলতে চেয়েছিলাম। যে চালটা ৫০ টাকা, সেটি শুধু প্যাকেট করেই ৭০-৭৫ টাকা বিক্রি করছে। একই চাল খোলা বাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারে। নিশ্চয়ই তারা কাস্টমার পাচ্ছে বলেই বিক্রি করতে পারছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা আজ প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছে। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চায় না। মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে এবং সেই চাল-ই খাওয়া হচ্ছে।তবে, চালের দাম কমাতে প্যাকেটজাত চাল বন্ধ করার জন্য যদি খাদ্য মন্ত্রণালয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তা চায় সেটা করা হবে জলেও জানান টিপু মুনশি।
মন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি উন্নতি না হয়, ততদিন স্বল্প দামে ১ কোটি মানুষকে পণ্য দেওয়া হবে। আগামী ১৫ জুন থেকে এক কোটি মানুষকে কম দামে পণ্য দেওয়া শুরু হবে। আগের মতো ছয়টি পণ্যই দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘পাম তেলের দাম আগের চেয়ে কমেছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অন্যান্য ভোজ্য তেলের দাম কমে আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে। আমি কখনোই বলিনি, ১৭ কোটি মানুষের পয়সা বেশি হয়েছে। রিয়েলিটি হলো, ২০ ভাগ মানুষের লো ইনকাম, সেটাকে কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। ১৭ কোটি থেকে ৩ কোটি বাদ দিলে ১৪ কোটি থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা প্রায় ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড ইউরোপের মতো। আমাদের দরিদ্র শ্রেণির ৩ কোটি মানুষকে অ্যাডজাস্ট করা দরকার, সেটাই করছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে সেটা আপনারাও জানেন।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘আমাদের দেখা দরকার সাধারণ মানুষ সঠিক মূল্যে পণ্য কিনতে পারছে কিনা। ক্রয়ক্ষমতাও দুইটি দিক রয়েছে, একটি হলো যারা উৎপাদনকারী এবং যারা ভোক্তা। আমরা যদি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাই যে উৎপাদনকারী আর ইন্টারেস্ট পাচ্চ্ছে না, তাহলে কিন্তু প্রভাব পড়বে। আমাদের দেখতে হবে উৎপাদন খরচ, প্রফিট, মার্জিন কতোটা থাকা উচিত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাইজের ক্ষেত্রে যেন কেনোভাবে বড় ধরনের পার্থক্য না থাকে। এটা দেখার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে আমাদের সাহায্য চাইবে আমরা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কথা হলো নিম্ন আয়ের মানুষের স্বার্থ দেখা। যার টাকা আছে, তিনি কী করবেন সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের কথা হলো ন্যায্য মূল্যে যেসব পণ্য পাওয়া উচিত, সেটা আমরা অবশ্যই দেখবো। খাদ্য মন্ত্রণালয় যখন আমাদের ডাকবে তখন আমরা অবশ্যই যাবো।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত